নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ২২, ২০২০
১০:১৬ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ২২, ২০২০
১০:১৬ পূর্বাহ্ন
‘দোকান বন্ধ থাকায় আয় নেই। জমানো টাকাও শেষ। এক মাসেই অবস্থা বেগতিক। মনে হচ্ছে সামনে ঘোর অন্ধকার। কী যে আছে কপালে? না-খেয়েই থাকতে হবে নাকি?’ এ আক্ষেপ নগরের জিন্দাবাজার এলাকার আক্তার হোসেন নামের এক কাপড়ের ব্যবসায়ীর। তিনি জানান, পয়লা বৈশাখ চলে গেল। সামনে আসছে রোজার ঈদ। এ দুটো উৎসব ঘিরে প্রচুর কাপড়-চোপড় বিক্রি হয়। অথচ এ সময়টাতে দোকান বন্ধ থাকায় প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখেমুখি হতে হয়েছে তাঁকে।
কেবল আক্তার হোসেন নন, তাঁর মতো মাঝারি পর্যায়ের অনেক ব্যবসায়ীর কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ জমেছে। সরকারি নির্দেশনায় করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সিলেটকে ‘লকডাউন’ করে রাখা হয়েছে। সবজি, ফল, মাছ, মুদি ও ওষুধের দোকানপাট ছাড়া সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সবাই এখন ঘরবন্দি সময় কাটাচ্ছেন। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন মাঝারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী কিংবা ছোট পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা পেশা বদল করে সবজি ও ফল কিংবা এখনকার উপযোগী মাস্ক ও স্যানিটাইজারসহ মৌসুমী ব্যবসায় এরই মধ্যে নেমে পড়েছেন। অন্যদিকে, বড় ব্যবসায়ী কিংবা শিল্পপতিদের দোকানপাট বন্ধ থাকলেও তাঁদের আর্থিক চিন্তায় থাকতে হচ্ছে না। এর বিপরীতে মাঝারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের চরম দুঃসময় যাচ্ছে এখন। কারণ, ওদের হাতে না আছে পর্যাপ্ত টাকা আর না তাঁরা বদল করতে পারছেন নিজেদের পেশা।
বন্দরবাজার এলাকার মধুবন সুপার মার্কেট ও হাসান মার্কেটের তিনজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় এক মাস হতে চলল তাঁরা দোকান বন্ধ রেখেছেন। প্রত্যেকের হাতেই সামান্য কিছু টাকা জমানো ছিল। এসব এ মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। এরপর যদি করোনা পরিস্থিতির কারণে দোকানপাট একই রকম বন্ধ থাকে, তাহলে তাঁদের অসহনীয় দুর্ভোগে পড়তে হবে। স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তাঁরা কীভাবে দিনানিপাত করবেন, সেটাই ভেবে কূল পাচ্ছেন না। সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির একজন সাবেক পরিচালক বলেন, মাঝারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণিভুক্ত। নানা সংকটের মধ্য দিয়ে এমনিতেই তাঁদের সংসার চালাতে হয়। জমানো টাকার পরিমাণও ওদের কাছে খুব একটা থাকে না। এর মধ্যে হঠাৎ করে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ায় তাঁরা চোখে অন্ধকার দেখছেন। ওই শ্রেণির মানুষদের আবার আত্মসম্মানবোধও প্রবল। ওরা না-খেয়ে থাকবে, কিন্তু কারও কাছেই সাহায্যের জন্য হাতও পাতবে না।
ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট নগরেই কয়েক হাজার মাঝারি পর্যায়ের ব্যবসায়ী রয়েছেন। এর মধ্যে রেস্তোরাঁ, হোটেল, বস্ত্র, জুতা, ফাস্টফুড, ট্রাভেল ও পরিবহনসহ নানা খাতের ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। এক মাসের ব্যবধানে অনেকের জমানো টাকাই এখন শেষ পর্যায়ে। এঁদের মধ্যে কিছু কিছু ব্যবসায়ী হয়তো আরও এক-দুই মাস কোনো রকমে টেনেটুনে চলতে পারবেন। কিন্তু এরপরই তাঁদের মধ্যেও টানাপোড়েন দেখা দেবে। অথচ করোনা পরিস্থিতির কবে উন্নতি হবে, সেটা এখনও নিশ্চিত করেই কেউ বলতে পারছেন না। তাই সিলেটসহ দেশের মাঝারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের অবস্থার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারি ও বেসরকারিভাবে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায় কি না, সেটা ভেবে দেখা প্রয়োজন। একই সঙ্গে সরকারি প্রণোদনার সুফল কীভাবে এসব ব্যবসায়ীরা পেতে পারেন, সেটাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সিলেট নগরের নয়াসড়ক ও কুমারপাড়া এলাকার পাঁচজন কাপড়ের ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ঈদের আগে তাঁরা দোকানপাট খুলতে পারবেন কি না, এ নিয়ে সন্দিহান রয়েছেন। আর দোকানপাট খুলতে পারলেও মানুষজন করোনাজনিত সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নগদ টাকা খরচ করে কাপড়-চোপড় আগের মতো কিনবেন কি না, সেটাও অনিশ্চিত। এ অবস্থায় সরকার সহজ শর্তে বিশেষ করে মাঝারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণ দিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারে। কুমারপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী সাকিব আহমদ সিলেট মিররকে বলেন, ‘দোকানপাট বন্ধ রেখে ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছি। জমানো টাকাও এখন শেষ পর্যায়ে। পরিচিত কারও কাছে যে ধার চাইব, সেটাও তো সম্ভব নয়। কারণ, পরিচিতজনদের অবস্থাও তো আমারই মতো!’