শহীদ আহমদ চৌধুরী, ফেঞ্চুগঞ্জ
এপ্রিল ২১, ২০২০
০৪:০৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ২১, ২০২০
০৪:০৯ পূর্বাহ্ন
ফাইল ছবি
বৈশাখের প্রথম থেকে শুরু হয়েছে কালবৈশাখী ঝড়। অব্যাহত রয়েছে বৃষ্টি। গত ১৭ এপ্রিল দিবাগত রাত থেকে ঝড়ের পর প্রতি রাতে হচ্ছে বৃষ্টি। অতিমাত্রায় বৃষ্টির ফলে দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। বিশেষ করে বোরো ধান নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন কৃষকরা। সেই সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ চলতে থাকলেও কিছু হাওর ছাড়া অনেক হাওরে বোরো ফসল কাটা শুরু হয়নি। করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমিক না পাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন কৃষকরা। আবার কিছু হাওরে ধানে চিটা পড়তে শুরু করেছে, কোথাওবা লালচে রং ধারণ করেছে। কেউ কেউ দুয়েকটি জমিতে ধান কাটতে শুরু করেছেন। এমন সব হাওরের ধান নিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা।
হাকালুকি হাওরে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু জমির ধান কাটা হয়েছে। কেউ ধান কাটছেন, কেউবা টেনে তুলছেন আবার কেউ ধান মাড়াই করছেন।
স্থানীয় কৃষক মন্তাই আলী বলেন, বোরো অনিশ্চয়তার ফসল। আল্লাহ দিলে ঘরে তুলি, আর নইলে পানির নিচে চলে যায়। এর জন্য আমরা একটু আগেভাগে চাষ শুরু করি। এই হাওরে প্রায় ৭০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। আর এক সপ্তাহ সময় পেলে সব ধান কাটা হয়ে যাবে।
কথা হয় গৃহস্থ সোরাব আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার ধান কাটতে খুব সমস্যা হচ্ছে। কারণ ধান কাটার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই অনেক কষ্ট হচ্ছে। চাতল বিলে ধান কাটা হয়ে গেছে প্রায় ৮০ ভাগ।
কৃষক পবন মিয়া বলেন, আমাদের ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে। আর ২/৪ দিন সময় পেলে ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। চিলুয়া বিলে এখনও ধান পাকতে প্রায় সপ্তাহ/১০ দিন বাকি। বিলের পানি দেরিতে নামায় বীজ বপন ও লাগাতে দেরি হয়েছে। যার ফলে বৈশাখের মাঝামাঝিতে পাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
ধান নিয়ে চিন্তিত কৃষকদের মতে, বোরো ধান কাটা বা ঘরে তোলা অনিশ্চিত। কারণ যেকোনো সময় অতিবৃষ্টিতে ধান তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়ে গেছে।
কথা হয় কৃষক কনা মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, চিলুয়া হাওরের ধান আল্লাহ চাইলে কাটব। তবে তা আরও ১০/১২ দিন পরে। কারণ আল্লাহর দেওয়া বৃষ্টির পানি ছাড়া জমিতে পানি দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নাই, ধান চাষ করারও ব্যবস্থা নাই। কোনো জনপ্রতিনিধি একটা কলও (নলকূপ) দেন না। নয়তো কবে ধান কাটতাম।
আরেক কৃষক রফিকুল ইসলাম খান বলেন, এই হাওরের দুই মাথায় দু'টো গভীর নলকূপ বসালে আর পানির চিন্তা করা লাগবে না। ধানের ফলন ভালো হবে।
তার সঙ্গে থাকা চান মিয়া বলেন, এই এলাকার চিন্তা কারও নেই। তাই তো আমাদের ধান কাটা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। চিলুয়া হাওরে দু'টো গভীর নলকূপ বসালে সুন্দরভাবে বোরো ফসল চাষ করা ও তোলা সম্ভব হবে।
৪ নম্বর উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহমেদ জিলু জানান, তার এলাকার ধোপড়িয়ার হাওরে গত ৫ দিন ধরে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এখনও অর্ধেক ধান কাটা সম্ভব হয়নি। সেই সঙ্গে রয়েছে শ্রমিক সংকট। স্বেচ্ছাশ্রমে আত্মীয়-স্বজন নিয়ে অনেকে ধান কাটার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত হাকালুকি ও চাতল ছাড়া আর কোনো হাওরে ধান কাটা শুরু হয়নি।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জে এখনও তেমন শিলাবৃষ্টি হয়নি। যার কারণে ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি যেসব জমির ৮০ ভাগ ধান পেকে গেছে, সেসব জমির ধান যেন তারা কেটে ফেলেন। একই সঙ্গে তারা যেন জমিতে রাস্তা কেটে দেন, যাতে বৃষ্টির পানি বাইরে চলে যায়।
এসএ/আরআর