সিলেটে বন্যার আভাস, বোরো ফসল নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক


এপ্রিল ২১, ২০২০
০২:৩৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২১, ২০২০
০২:৩৬ পূর্বাহ্ন



সিলেটে বন্যার আভাস, বোরো ফসল নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা

করোনা দুর্যোগে এমনিতেই কর্মহীন মানুষের নাভিশ্বাস ওঠেছে; তার মধ্যে বন্যার পূর্বাভাস এসেছে মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে। চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে কিংবা আগামী সপ্তাহে সিলেটজুড়ে বন্যা হতে পারে। আর বন্যা হলে সিলেট অঞ্চলের মানুষ পড়তে পারেন মহাবিপদে। কারণ এখনও সিলেট বিভাগের চার জেলার বোরো ফসলের ২০ ভাগও ঘরে তোলা হয়নি। করোনা দুর্যোগের কারণে শ্রমিক সংকটের কারণেই এ বছর ধান কাটা বিলম্বিত হচ্ছে।

সিলেট বিভাগে গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। একটানা বৃষ্টি হচ্ছে ভারতের মেঘালয়, বরাক ভ্যালি ও ত্রিপুরায়। ভারতের বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটে যে কোনো সময় বন্যা হতে পারে। তলিয়ে যেতে পারে চার জেলার বোরো ফসল। 

গতকাল রবিবারও (১৯ এপ্রিল) সিলেট, রাজশাহী, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। আগামী কয়েকদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলেই আভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, আগামীকাল মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) থেকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত হবে। রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামসহ দেশের মধ্যাঞ্চলেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সপ্তাহব্যাপী চলবে এই বৃষ্টি। এই সময় থেকে চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত কোথাও দমকা হাওয়া, বজ্রসহ শিলাবৃষ্টি হবে। আবহাওয়া অফিস আরও জানায়, এখন কালবৈশাখীর সময়। চলতি মাসের অবশিষ্ট সময় সিলেট অঞ্চলে প্রতিদিনই থেমে থেমে বৃষ্টি হবে। 

বন্যার আভাস দিয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে, ভারতে ভারি বর্ষণের কারণে চলতি সপ্তাহে বা আগামী সপ্তাহে উত্তর-পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার কয়েকটি স্থানে আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে।

গত ২৪ সিলেট জেলায় ২৩.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে সিলেট মিররকে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের আবহাওয়া সহকারী অমর তালুকদার। আগামী ২৪ ঘণ্টার তারও বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে তিনি জানান। 

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কৃষক জমির উদ্দিন ফসল হারানোর শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘এবার ধান কাটার শ্রমিক আসেনি। তাই অতিরিক্ত মজুরিতে স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে ধান কাটাতে হচ্ছে। হাওরে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে। এ অবস্থায় বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে যেকোনো সময় হাওরের ফসল তলিয়ে যেতে পারে।’ এ বছর সরকার ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের কম্বাইন হার্ভেস্টর এবং রিপার মেশিন দিচ্ছে। কিন্তু ৩০ শতাংশ টাকা দিতে না পারায় মেশিনগুলো নিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। ফলে মেশিনগুলোর অধিকাংশই পড়ে আছে সরকারি গুদামে।    

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, সিলেট বিভাগে এবার ৪ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। যা থেকে ১৮ লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে এবার ধান কাটার শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকরা। বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত সিলেট বিভাগে মাত্র ২০ শতাংশ ধান কেটেছেন কৃষকরা। বাকি ৮০ শতাংশই রয়ে গেছে হাওরে। তাই বন্যার আশঙ্কায় এবার বোরো ফসল ঘরে তোলা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সিলেটের চার জেলার কৃষকরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ শ্রীনিবাসন দেবনাথ আজ সোমবার বিকেলে সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমরা ধান কেটে দ্রুত ঘরে তুলতে কৃষকদের বারবার তাগিদ দিচ্ছি। কৃষকদেরকে নানাভাবে সহযোগিতাও করছি।’ আজ সোমবার (২০ এপ্রিল) পর্যন্ত হাওরের ২০ ভাগ ধান ঘরে তোলা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এনপি-০৮/বিএ-১৪