যেখানে বাজার, সেখানেই ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক


এপ্রিল ২০, ২০২০
১০:১৫ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২০, ২০২০
১০:১৫ পূর্বাহ্ন



যেখানে বাজার, সেখানেই ভিড়

সবজি বাজার থেকে মাছের বাজার এবং মুদি দোকান থেকে ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী-সবখানেই মানুষের সরগরম। সবখানেই ভিড়। করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেটির কোনো বালাই নেই হাটবাজারে। ঠাসাঠাসি করে একে অপরের শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বাজার করছেন অনেকেই। ফলে ঝুঁকিতে পড়ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। মাঝখানে ভিড়বাট্টা কিছুটা কমে এলেও এখন দিনে দিনে যেন আবার ভিড় বাড়ছেই।

গতকাল রবিবার বিকেলে নগরের বিভিন্ন হাটবাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, সবখানেই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। ক্রেতা-বিক্রেতাদের কারও মুখে মাস্ক আছে, আবার কারও মুখে মাস্ক নেই। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে মানুষজন দরদাম করছেন। কিছু কিছু মুদি দোকানে পা ফেলার জায়গা ছিল না। ক্রেতাদের কাউকে কাউকে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে প্রকাশ্যে হাঁচি-কাশি দিতেও দেখা গেছে। করোনাভাইরাসের বিষয়টিতে যেন কারও ভ্রুক্ষেপই নেই। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, শত অনুরোধ করেও স্থানীয় প্রশাসন মানুষের জটলা কোনোভাবেই কমাতে পারছেন না। এ অবস্থায় মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

নগরের মদিনামার্কেট এলাকার একটি মুদি দোকানে দেখা গেছে, কমপক্ষে ১০ জন মানুষ ঘেঁষাঘেঁষি করে দোকানের ভেতর দাঁড়িয়ে বাজার করছেন। বিক্রেতারা দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করার জন্য একাধিকবার আহ্বান জানালেও কেউ এতে কর্ণপাত করছেন না। প্রচুরসংখ্যক মানুষকে পাশপাশি দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে নগরের বন্দরবাজার, আম্বরখানা, শিবগঞ্জ, উপশহর, জিন্দাবাজার, রিকাবিবাজার, সুবিদবাজার, মদিনামার্কেট, বারুতখানা ও লালবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায়। মূলত বাজারকেন্দ্রিক মানুষের ভিড় বেশি দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অনেকে জরুরি কেনাকাটার জন্য বাজারে আসছেন। আবার অনেকে বাজারের অজুহাতে বন্ধু কিংবা পরিচিতজনদের সঙ্গে দেখা করতেও অযথা বাজারে ভিড় জমাচ্ছেন।

আম্বরখানা এলাকায় কথা হয় মহিউদ্দিন আহমেদ নামের এক তরুণের সঙ্গে। তিনি শিক্ষার্থী হিসেবে নিজের পরিচয় জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে বাসার বাইরে বোরোইনি। তাই বেরোলাম। এছাড়া একেবারে যে বিনা কারণে বেরিয়েছি, তাও নয়। মোবাইলে ফ্ল্যাক্সি ছিল না। তাই ফ্ল্যাক্সিলোড করলাম। এ ছাড়া একটি রেজারও কিনলাম।’ একই এলাকায় কথা হয় নাজিম উদ্দিন নামের সুবিদবাজার এলাকার এক বাসিন্দার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাসায় সবজি নাই। কিছু সবজি কিনতে এসেছি। কিন্তু এখানে পছন্দমতো সবজি পেলাম না। তাই ভাবছি, একটু বন্দরবাজার যাব। হেঁটেই এখন বন্দরবাজারের দিকে রওয়ানা হব।’

গতকাল বেলা সাড়ে চারটায় চেইনশপ স্বপ্নে গিয়ে দেখা গেছে, প্রচুরসংখ্যক মানুষ দোকানটিতে কেনাকাটা করছেন। তবে দোকানে প্রবেশের আগেই এর কর্মচারীরা আগুন্তুকের পায়ে ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানি এবং হাতে জীবাণুনাশকরণ স্যানিটাইজার দিচ্ছেন। সেখানে আমজাদ হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘স্বপ্নে তুলনামূলকভাবে প্রশস্ত জায়গা রয়েছে। তাই ঘেঁষাঘেঁষি এড়িয়ে বাজার করা এখানে সম্ভব। এ কারণেই এখানে এসেছি। তবে ক্রেতাদের পরিমাণও কিন্তু এখানে কম নয়।’ এই দোকানটির সামনে বেশ কয়েকজন ভিক্ষুককে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করতে দেখা গেছে। তাঁদের একজন জানালেন, নগরের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। তবে স্বপ্নে অনেক মানুষ প্রতিদিন কেনাকাটা করতে আসেন। তাই তাঁরা সামান্য টাকার আশায় দিনের পুরোটা সময় এখানেই থাকেন।

নগরের কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, স্থানীয় প্রশাসন সিলেটকে ‘লকডাউন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর অংশ হিসেবে পুলিশ প্রশাসন যান চলাচল সীমিত করতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করেছে। আবার অনেক পাড়া-মহল্লার উদ্যোগে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে। তবে বাজারগুলোতে এখনও মানুষের চলাচল সীমিত করা যায়নি। মদিনামার্কেট এলাকার কয়েকজন সবজি ও মাছ বিক্রেতা জানিয়েছেন, এমনও ব্যক্তি রয়েছেন, তাঁরা করোনাভাইরাস পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগের নিয়মানুযায়ী এখনও প্রতিদিন কেনাকাটা করছেন। অথচ একদিন বেশি করে সবজি কিনে টানা কয়েকদিন তা খাওয়া সম্ভব। কিন্তু তাঁরা সেটি না করে প্রতিদিনকার সবজি প্রতিদিনই এসে কিনছেন।

বন্দরবাজার এলাকায় কথা হয় মোছাব্বের আহমদের সঙ্গে। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। সিলেট মিররকে তিনি বলেন, ‘সাত দিন পর বাসা থেকে বেরিয়েছি জরুরি কিছু কেনাকাটা সারতে। নিজের ও স্ত্রীর কিছু জরুরি ওষুধ প্রয়োজন, সেসব কিনব। এ ছাড়া সবজি ও মাছ কিনব। কিন্তু বাইরে এসে তো তাজ্জব বনে গেলাম! এত এত মানুষ বাজারে কেনাকাটা করতে এসেছেন। মানুষ জরুরি প্রয়োজনে বাজারে আসতেই পারেন, কিন্তু একজন আরেকজনের শরীরে ঘেঁষে, প্রকাশ্যে হাঁচি-কাশি দিয়ে যেভাবে বাজারসওদা করছেন, সেটা তো মেনে নেওয়া যায় না। এভাবে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাবেন কীভাবে?’