সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
এপ্রিল ১৯, ২০২০
১১:১৮ অপরাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ১৯, ২০২০
১১:২২ অপরাহ্ন
একদিকে করোনার থাবা, অন্যদিকে হাওরের পাকা ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা। এই শাখের করাতে হাওরের চাষীরা। কৃষকের ফসল দ্রুততম সময়ে কেটে তুলতে সরকার হাওরের কৃষকদের ভর্তুকি দিয়ে এই মওসুমে ধানকাটার কম্বাইন হার্ভেস্টর ও রিপার মেশিন দিয়েছে। কিন্তু করোনা সংকটে বিপর্যস্ত কৃষক এখন ভর্তুকির টাকা দিয়ে মেশিন নিতে পারছে না। তাই হার্ভেস্টর মেশিনের অধিকাংশই পড়ে আছে গুদামে। হাওরের ধান কেটে দ্রুত ঘরে তুলতে সরকার এই মেশিনগুলো বরাদ্দ দিলেও তার সুফল ভোগ করতে পারছেন না কৃষকরা। এসব মেশিন হাওরের জমির ধান কাটার সম্পূর্ণ উপযোগী নয় বলেও হাওর আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ দাবি করছেন।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকার ৭০ ভাগ ভর্তুকি দিয়ে চলতি মাসে ৪০টি কম্বাইন হার্ভেস্টর বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতিটি মেশিনের মূল্য ১১লাখ থেকে ২৯ লাখ টাকার মধ্যে। এই মেশিনে ঘণ্টায় তিন একর জমির ধান কাটা সম্ভব। এছাড়াও চলতি মাসে ২৭টি রিপার মেশিন বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই মেশিনের মূল্য ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। এই যন্ত্রে ঘণ্টায় ৩০ শতক জমির ধান কাটা যায়। তবে এই দুটো যন্ত্রই হাওরে বোরো ধান কাটার জন্য উপযুক্ত নয় বলে কৃষক ও হাওর আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ জানিয়ে আসছেন। হাওরের ‘কান্দা’ শ্রেণির অল্প জমির ধান এই মেশিনে কাটার সুযোগ রয়েছে। তাই এই মওসুমে কিছুটা হলেও কৃষকের কাজে দেবে মেশিনগুলো। কিন্তু ভর্তুকির টাকার জন্য মেশিনগুলো কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার সুনামগঞ্জে সম্প্রতি এই যন্ত্রগুলো বরাদ্দ দেয়। ৭০ ভাগ ভর্তুকি দিয়ে এই মেশিন কৃষকদের দেওয়া হয়। কিন্তু এখন করোনার কারণে কৃষকরা নানা সংকটে আছেন। তাদের হাত খালি। এই অবস্থায় ভর্তুকির এই মেশিন নিতে পারছেন না অধিকাংশ কৃষক। ফলে ধান কাটার এই সময়ে মেশিনগুলো সরকারি গুদামেই পড়ে আছে। তাই কৃষকরা বিনা জামানতে মেশিনগুলো বিশেষভাবে বন্টনের দাবি জানিয়েছেন।
হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, ‘সরকার কৃষককে ধান কাটার জন্য এই যন্ত্র দিয়েছে। যদিও এই যন্ত্র হাওরের জন্য পুরোপুরি উপযোগী নয়। তারপরও কিছু জমির ধান কাটা সম্ভব। কিন্তু ধান কাটার মওসুম শুরু হলেও কৃষক টাকা দিতে না পারায় মেশিনগুলো অলস পড়ে আছে। এতে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘শর্তসাপেক্ষে টাকা ছাড়াই এখন মেশিনগুলো বন্টন করা উচিত। ফসল তোলার পর কৃষকরা টাকা দেবেন। না হলে এখন এই করোনা সংকটে কেউ মেশিন নিতে পারবে না।’
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সফর উদ্দিন বলেন, ‘সম্প্রতি কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার ৪০টি কম্বাইন হার্ভেস্টর ও ২৭টি রিপার মেশিন দিয়েছে। হাতেগোনা কয়েকটি মেশিন নিয়েছেন কৃষকরা। বাকি কৃষকরা এখন এই মেশিন নিতে চাইছেন না। তারা জানিয়েছেন, হাতে টাকা নেই। বিনা টাকায় আবার এই মেশিন কৃষককে দেওয়ার নির্দেশনাও নেই। তাই গুদামে পড়ে আছে।’
এসএস-০১/এনপি-০২/এএফ-০৭