সিলেটে বজ্রপাতে প্রাণ গেল ৯ জনের

নিজস্ব প্রতিবেদক


এপ্রিল ১৯, ২০২০
০৮:১৫ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১৯, ২০২০
০৮:২৯ পূর্বাহ্ন



সিলেটে বজ্রপাতে প্রাণ গেল ৯ জনের

করোনা আতঙ্কের মধ্যে আজ সারা দিনই সিলেটবাসীকে আতঙ্কিত করে রেখেছিল বজ্রপাত। আজ শনিবার (১৮ মার্চ) সিলেট বিভাগে বজ্রপাতে একদিনেই মারা গেছেন ৯ জন। বজ্রপাতে এত মৃত্যু সিলেটবাসীকে নতুনভাবে দুঃখে ভাসালো।

জানা যায়, আজ শনিবার (১৮ এপ্রিল)  দুপুরে কালারুকা পশ্চিম হাওরে (উনাখাওরি বিল) ধান কাটতে যান শমসের আলী ও তার ছেলে ছয়ফুল আহমদ। এ সময় কালবৈশাখীর ঝড়ের সাথে প্রচন্ড বজ্রপাত হতে থাকে। বজ্রপাতে বাবা ও ছেলে ঘটনাস্থলেই মারা যান। সিলেট জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অকিল উদ্দিন বিষয়টি সিলেট মিররকে নিশ্চিত করেছেন।

সিলেটের ওসমানীনগরে বজ্রপাতে এক কিশোর নিহত হয়েছে। তার নাম রাহী আহমেদ (১৬)। জানা যায়, শনিবার সকালে রাহী রুনিয়ার হাওরে মাছ ধরতে গেলে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে আকস্মিক বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। পরে খবর পেয়ে তার পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেন।

সিলেটের জকিগঞ্জে আজ শনিবার বিকেলে সংঘটিত বজ্রপাতে নিজের গরুসহ এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু ঘটেছে। নিহত ব্যবসায়ীর নাম ইসলাম উদ্দিন বলই (৪০)। তিনি উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের দরগাবাহারপুর গ্রামের আতাই মিয়ার ছেলে ও কালিগঞ্জ বাজারের তানিশা বস্ত্র বিতানের মালিক। জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মো. আব্দুন নাসের বিষয়টি  নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন জানান, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মাঠ থেকে গরু নিয়ে বাড়িতে ফেরার পথে ইসলাম উদ্দিন বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই গরুসহ তিনি মারা যান।

এছাড়া সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা ও জগন্নাথপুর উপজেলায় বজ্রপাতের ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে একই সময়ে এ চারজনের মৃত্যু হয়।

জানা যায়, বজ্রপাতে হাওরে কাজ করার সময় দুই কৃষক মারা গেছেন। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় শাল্লা উপজেলায় একজন এবং জগন্নাথপুর উপজেলায় আরেকজন একই সময়ে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান।

এলাকাবাসী জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় ঝড় শুরু হয়। এসময় বজ্রপাতের ঘটনাও ঘটে। বজ্রপাতে শাল্লা উপজেলার নারায়ণপুর গ্রাম থেকে শাষখাই যাওয়ার পথে কৃষক শঙ্কর সরকার (২২) ঘটনাস্থলেই বজ্রাঘাতে মারা যান। এদিকে জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরে কাজ করার সময় মারা যান উপজেলার বাউধরন গ্রামের কৃষক শিপন মিয়া (২৪)। এসময় তার গরুও মারা যায় বজ্রপাতে।শাল্লা উপজেলা চেয়ারম্যান আল আমিন চৌধুরী ও জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে দক্ষিণ সুনামগঞ্জে হাওরে গরু নিয়ে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ফরিদ মিয়া (৩৫) নামের একজনের মৃত্যু হয়।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়,  আজ শনিবার সকালে গাজীর খাল নামক হাওরে ২ টি গরু নিয়ে যান ফরিদ মিয়া। এসময় ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হলে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে ২ টি গরুসহ ফরিদ উদ্দিনের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে খবর পেয়ে তার লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় বজ্রপাতে একজন নিহত হয়েছেন। আজ সকাল ১০ টার দিকে দিরাই উপজেলার উদগল হাওরের চিনাউড়া নামক স্থানে তাপস মিয়া (৩৫) নামে ধানকাটার এক শ্রমিকের বজ্রপাতে মৃত্যু হয়। 

সরমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান চৌধুরী জানান, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসূখা গ্রামের নিহত তাপসসহ কয়েকজন শ্রমিক সরমঙ্গল গ্রামের ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দিন ও কতুব উদ্দিনের বোরো ধান কাটার জন্য এসেছেন। আজ সকালে তারা ধান কাটার জন্য হাওরে যায়, ১০টার দিকে বৃষ্টি নামলে দৌড়ে সরমঙ্গল গ্রামে ফেরার পথে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।

আর হবিগঞ্জের মাধবপুরে হাওরে গরু চরাতে গিয়ে লালু মিয়া (৩৯) নামের এক ব্যবসায়ী বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। আজ শনিবার সকালে উপজেলার আন্দিউড়া ইউনিয়নের মুরাদপুর হাওরে এ ঘটনা ঘটেছে।

গ্রামের বাসিন্দা ফকির কাউছার আহমেদ জানান, লালু মিয়া একজন গরু ব্যবসায়ী। আজ সকালে পার্শ্ববর্তী হাওরে গরু চড়াতে যান তিনি। এ সময় বৃষ্টি ও বজ্রপাত হলে লালু মিয়া বজ্রাঘাতে গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্বার করে স্বজনরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. অদিতি রায় লালু মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এ এইচ এম ইশতিয়াক মামুন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এনএইচ/বিএ-২৫