সিলেট মিরর ডেস্ক
এপ্রিল ১৭, ২০২৫
০৪:০১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ১৭, ২০২৫
০৪:১০ পূর্বাহ্ন
ভারত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে। এরপর দুই দিনে পাঁচটি ট্রাক ফিরিয়ে দেয় দেশটি। এতে পণ্য বিদেশে পাঠানো নিয়ে রপ্তানিকারকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে সিলেট বিমানবন্দর দিয়ে ২৭ এপ্রিল থেকে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হবে। প্রথম দিন কার্গো ফ্লাইট যাবে স্পেনে।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া এ কথা জানিয়েছেন। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও শিগগির কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হবে।
বাংলাদেশ কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ব্যবহার করে বাংলাদেশ ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৪৬২ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই সময়ের মধ্যে ভারত হয়ে বিশ্বের ৩৬টি দেশে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টন পোশাক। ফলে সম্প্রতি ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করায় বিকল্পের সন্ধান করতে হচ্ছে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের।
এ অবস্থায় সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইটে পণ্য পরিবহনের দাবি সামনে আনেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে টাওয়ার ফ্রেইট লজিস্টিকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েসনের (বাফা) ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহারের বিষয়টিকে কেবল নেতিবাচকভাবে না দেখে সম্ভাবনার দিক থেকেও ভাবার সুযোগ রয়েছে। ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দেওয়ায় রপ্তানি খাতে সাময়িক সমস্যা হবে। তবে আমরা সক্ষমতা বাড়াতে পারলে তা আমাদের জন্য একটি সুযোগে পরিণত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারত থেকে রপ্তানি করলে পরিবহন ব্যয় কম লাগত। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করলে খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়। এ বিষয়ে সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। দেশের কার্গো সুবিধা বাড়াতে হলে খরচ কমাতে হবে, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিস ভালো করতে হবে এবং সময়মতো সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে।’
কার্গো সুবিধা ইস্যুতে দেশের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বাণিজ্য এবং বিমান ও পর্যটন উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। তিনি সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেন, ‘ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় বাংলাদেশ বড় কোনো সমস্যায় পড়বে বলে মনে হয় না। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব অংশীজন, বাংলাদেশ বিমান, সিভিল এভিয়েশন, প্রাইভেট সেক্টর সবার সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। সমস্যা উত্তরণে কিছু অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে, কিছু বাড়তি খরচের বিষয় রয়েছে। আমরা কাজ করছি, আশা করছি সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারব।’
এরই অংশ হিসেবে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেবিচক কর্মকর্তারা। তারা বলেন, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ক্যাটাগরি ১-এ উন্নীত হয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের (আইকাও) একটি প্রতিনিধিদল বিমানবন্দর দুটি পরিদর্শন করে এ ঘোষণা দেয়। এ দুটি বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো ফ্লাইট চালু হলে একদিকে ভোগান্তি কমবে, অন্যদিকে বাড়তি অর্থ ও খরচ বাঁচবে ব্যবসায়ীদের।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, পণ্য রপ্তানিতে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা ও পণ্য রপ্তানির জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২৭ এপ্রিল প্রথম কার্গো ফ্লাইট উড়াল দেবে সিলেট থেকে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়েও এই সুবিধা চালু হবে।
দেশের সব বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়ে আসা প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসই এবারও এই সেবা দেবে। বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘কার্গো ফ্লাইটের সব সুবিধা যেন ঠিকভাবে দেওয়া যায়, তার জন্য আমরা ঢাকা থেকেও কিছু ইক্যুইপমেন্ট পাঠিয়েছি। এ ছাড়া সিলেটে তো আগে থেকে সেবা নিশ্চিত করার যন্ত্রপাতি আছেই। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিতে প্রস্তুত।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে এক দিন এই ফ্লাইট পরিচালিত হবে। প্রথম পর্যায়ে কেবল শুকনো পণ্য এই ফ্লাইটে পরিবহন করা যাবে। সে ক্ষেত্রে গার্মেন্টস পণ্যই প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করছি।’
খবরের কাগজ/এএফ-০২