নাদির আহমেদ, শাবিপ্রবি
আগস্ট ১১, ২০২৪
০৪:১৬ অপরাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ১১, ২০২৪
০৪:১৬ অপরাহ্ন
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে(শাবিপ্রবি) একে একে পদত্যাগ করেছেন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধক্ষ, প্রক্টরিয়াল বডি, সকল হলের প্রভোস্ট,গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক, পরিবহন প্রশাসক এবং মেডিকেল প্রশাসক। ফলে অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এতে বাড়ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি।
এদিকে বুধবার (৭আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্র উপদেষ্টা, প্রভোস্ট বডি, শিক্ষক সমিতিসহ আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সকল শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
আল্টিমেটামের মধ্যেই বৃহস্পতিবার (৮আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা, ৬টি হলের প্রভোস্ট বডি রেজিস্ট্রারের কাছে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন।
এরপর শনিবার (১০আগস্ট) বিকালে ব্যাক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি ২০১৭ সালের ২১ অগাস্ট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। প্রথম মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ২০২১ সালের ৩০ জুন তাকে দ্বিতীয় মেয়ােদ আবারো নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের ২১ অগাস্ট। তবে মেয়াদ শেষের এক বছর ১১ দিন আগেই পদত্যাগ করছেন তিনি।
উপাচার্যের পদত্যাগের পর বিকালে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আমিনা পারভীন পদত্যাগ করেছেন বলে জনসংযোগ দপ্তর নিশ্চিত করে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক এস এম সাইফুল ইসলাম, পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ও মেডিকেল প্রশাসক অধ্যাপক আসিফ ইকবালও পদত্যাগ করেন। তবে এদিন বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কবির হোসেন পদত্যাগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে নিজের অবস্থান ক্লিয়ার করে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসতে আগ্রহী বলে জানান। এরপর শিক্ষার্থীরা বিরূপ মন্তব্য করে সসম্মানে পদত্যাগের আহ্বান জানায়। পরে রাতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ড. কবির হোসেন। এতে একের পর এক পদত্যাগের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,ছেলেদের ৩টি হলে ২ শতাধিক, মেয়েদের ৩ হলে প্রায় একশ শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। তবে তারা নিরাপত্তাহীনতা এবং খাবারের সংকটে ভুগছেন। অনেকে চুরি রাহাজানির ভয়ে রাতে হলে অবস্থান করছেন না। এতে প্রক্টরিয়াল বডি ও হল প্রশাসনের কোনো তৎপড়তা না থাকায় ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা অনায়াসে প্রবেশ করছেন বলে জানান নিরাপত্তাকর্মীরা। এতে কিছু জায়গায় মেয়েদের টিজিং করাসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেন, 'আজকে আমার একজন জুনিয়র (মেয়ে) ফার্স্ট লেডিজ হলের সামনের রাস্তায় একা হেঁটে যাওয়ার সময় তার সামনে থেকে একটা বাইক আসছিল। বাইকটা তাকে ক্রস করে যাওয়ার সময় বাইকে পেছনে বসা লোক তার হাত ধরে টান দেয় এবং গোলচত্বরের দিকে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় সে সামান্য আহতও হয়। তার ভাষ্যমতে সে ক্যাম্পাসের গেইটে কোন সিকিউরিটি গার্ড দেখেনি। সে যথেষ্ট ট্রমাটাইজড এই ঘটনা নিয়ে।'
নিরাপত্তার বিষয়ে (২০২২-২০২৩) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলাম বলেন,'অন্যন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বরাবরই ভালো ছিলো। যেহেতু বর্তমানে প্রশাসন নাই তাই ক্যাম্পাস অনিরাপদ ভাবে রয়েছে। আমি চাইবো একটা ভালো প্রশাসন আসুক যারা শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।যেহেতু রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নাই তাই খুব বেশি অনিরাপদ মনে করছিনা। তারপরেও একটা অনিশ্চয়তা রয়েই যায়।'
সার্বিক বিষয়ে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর মোহাম্মদ আলী অক্কাস সিলেট মিররকে বলেন, 'যেহেতু সবাই পদত্যাগ করেছেন তাই অবশ্যই ক্যাম্পাস এখন অনিরাপদ।বিশ্ববিদ্যালয় গার্ডদের উচিত সক্রিয় থাকা সবসময়। তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তাদেরও জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা প্রয়োজন। আমরা আসা করি দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শিক্ষার্থীবান্ধব প্রশাসন আসবে। যারা শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি পূরন করতে সক্ষম হবে।'
এএফ/০৮