‘সাংবাদিক হতে কমপক্ষে গ্র্যাজুয়েট, পাঁচ বছরের অভিজ্ঞদেরও গ্রহণ করব’

নিজস্ব প্রতিবেদক


মে ২৬, ২০২৪
০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ২৭, ২০২৪
০৭:০৬ অপরাহ্ন



‘সাংবাদিক হতে কমপক্ষে গ্র্যাজুয়েট, পাঁচ বছরের অভিজ্ঞদেরও গ্রহণ করব’
সিলেটে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান


সাংবাদিকতার মান উন্নয়নে এবং শৃঙ্খলা ফেরাতে ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে জানিয়ে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম বলেছেন, ‘এটা আমরা করবই। ডাটাবেজের ফরম পূরণের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এক সময় যদি আমরা বলি আর নেবো না। তাহলে কিন্তু বাদ পড়ে যাবেন। আমি এটা চাই না।’ সাংবাদিক হতে গেলে কমপক্ষে গ্র্যাজুয়েট এবং পাঁচ বছরের অভিজ্ঞদের গ্রহণ করা হবে বলে এসময় তিনি জানান। 

গতকাল শনিবার নগরের আম্বরখানায় হোটেল ব্রিটেনিয়ার কনফারেন্স হলে আয়োজিত একটি কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম এসব কথা বলেন। ‘সংবেদনশীল সংবাদ প্রচার: সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এই কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। 

ব্লাস্ট সিলেট ইউনিটের সমন্বয়কারী (ভারপ্রাপ্ত) অ্যাডভোকেট সত্যজিৎ কুমার দাসের সঞ্চালনায় কর্মশালায় আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকরামুল কবির, ব্লাস্ট সিলেটের সাবেক সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট ইরফানুজ্জামান চৌধুরী, সোশ্যাল জাস্টিস অ্যান্ড ইনক্লুশান ক্লাস্টারের উপদেষ্টা আহমেদ ইব্রাহীম, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সিলেট বিভাগীয় সভাপতি সৈয়দা শিরিন আক্তার। 

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিন। উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন ব্লাস্টের অ্যাডভোকেসী ও কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মাহবুবা আক্তার। 


প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম যা বললেন (ভিডিও লিংক)


অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল (পিআইবি) চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো মানুষই নীচু স্তরের নয় এবং আমাদের কারোর অধিকার নেই কারো সম্মানে আঘাত করার। প্রত্যেকে তার সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে। সে ধনী হোক, গরীব হোক, হিন্দু হোক, মুসলিম হোক, নারী হোক-সে ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।’ মানুষের চিন্তা চেতনায় পরিবর্তন আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। কারণ আগে যেসব শব্দ ব্যবহার করা হতো সেগুলো এখন ব্যবহার হচ্ছে না। একটা পরিবর্তন আসছে-এটা বুঝা যাচ্ছে।’

সাংবাদিকদের ডাটাবেজ তৈরির চিন্তার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হয়ে আসি ২০২১ সালে। এসে কাগজপত্র ঘেটে দেখলাম, সাংবাদিকদের কিভাবে নেওয়া হবে, কিভাবে সাংবাদিক হবে-এ ধরণের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে কিনা? দেখলাম এরকম কিছুই নেই। মানে ইচ্ছামত একজন পত্রিকা মালিক পাঁচ জনকে ডেকে বললেন, আপনারা কাজ করেন-তারা সাংবাদিক হয়ে গেলেন। এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল।’ তিনি সঙ্গে যোগ করেন, ‘তবে এই প্রচেষ্ঠাকে আমি খারাপ বলল না। কারণ প্রথম দিকে যারা কাজ করেছিলেন আমাদের দেশে, অনেক প্রতিথযশা সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, আব্দুস সালাম, গৌর সেন চৌধুরী থেকে আব্দুল গফফার চৌধুরী পর্যন্ত অনেক বড় বড় সাংবাদিক আমরা দেখেছি। তারা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশে নয়, আমি বলি তারা পৃথিবী বিখ্যাত সাংবাদিক। তারা কেউ সাংবাদিকতায় ডিগ্রিধারীও নন, সাংবাদিকতার ট্রেনিংও নেননি। কিন্তু তারাই সাংবাদিক তৈরি করার ভিত তৈরি করে গেছেন।’

কিন্তু এখন বাস্তবতা ভিন্ন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু সময়ের বিবর্তনে যখন আমরা দেখলাম একটা সময়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা চলছে। বিভিন্ন মহল প্রশ্ন তুলল-সাংবাদিক কারা? কেউ বলল-মাছের বাজারে মাছ বিক্রি করে বিকেলে সাংবাদিকতা, কেউ দোকানদারি করে বিকালে সাংবাদিকতা করে। দ্বৈত পেশা। এটিকে আমি অপছন্দ করব না। কারণ এখনো আমাদের সাংবাদিকের সংখ্যা কম। আগে আমরা দেখেছি, অনেক নামকরা সাংবাদিক যিনি আইনজীবী কিন্তু পার্টটাইম সাংবাদিক, ব্যবসায়ী কিন্তু পার্টটাইম সাংবাদিক। তাদের যে অমূল্য অবদান ছিল সাংবাদিকতার উন্নয়নে সেটি অস্বীকার করতে পারব না।’ 

সাংবাদিকতার নীতিমালা হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু সময় এসেছে এখন, সাংবাদিকতার নীতিমালা করা দরকার। নীতিমালা হয়ে গেছে। সেটা কারো চাপে বা সরকারের চাপে নয়। যারা অংশীদারীজন, সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো-তাদের নিয়ে প্রেস কাউন্সিলের নেতৃত্বে একটি সভা করা হলো।’

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও তালিকা করার নির্দেশনা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলা হলো, সাংবাদিকদের একটা লিস্ট করেন। এখন স্বাভাবিকভাবে প্রথমে প্রশ্ন হলো-কারা সাংবাদিক? কেউ ফাইভ পাস, পত্রিকায় লিখে, সে কী সাংবাদিক? আবার কেউ পত্রিকার মালিক তারা কি সাংবাদিক? এই বিষয় নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে দুইদিন সভা করতে হয়েছিল। সেখানে সিদ্ধান্ত হলো সাংবাদিক হতে হলে অবশ্যই ¯œাতক হতে হবে। তখন প্রশ্ন এলো একজন বিশ বছর ধরে সাংবাদিকতা করেন ¯œাতক না। তাদের কী আমরা বাদ দেবো। তখন সিদ্ধান্ত হলো, যারা অভিজ্ঞ তাদের আমরা রাখব। এরপর আমরা ডাটাবেসের নোটিশ দিলাম সারা দেশে। কেউ জমা দিয়েছেন পূরণ করে, কেউ দেননি এখনও।’ তিনি আরো বলেন, ‘ফরমে লেখা আছে, আপনি কতটুকু লেখাপড়া করেছেন। চাকরিতে থাকলে কবে আপনি যোগদান করেছেন? যোগদানপত্রে সম্পাদকের স্বাক্ষর থাকতে হবে।’

ডাটাবেজের তালিকা এখনো অনেকে পূরণ করেননি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘৬৪ জেলার মধ্যে ৩৫ জেলার আমরা লিস্ট পেয়েছি। যাচাইবাছাই হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা ডেয রিকুয়ারমেন্ট চেয়েছি সে অনুযায়ী খুব কম লোক পেয়েছি। চার ভাগের একভাগ টিকেছেন। বাকিদের কাগজপত্রে ঘাটতি আছে। কেউ হয়তো বলেছেন তার দশ বছরের অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু তিনি কোনো নিয়োগপত্র দেননি। এটা ঘাটতি। এরকম হয়েছে।’ আবেদনকারীদের চার ভাগের তিন ভাগই টিকেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত ৩ হাজার ২০০ এর মতো আবেদন পেয়েছি। সেখান থেকে ৮০০ টিকেছে। তার মানে এই নয় যে বাকিরা বাদ পড়ে যাবেন। তাদের আমরা জানাবো যে কি ঘাটতি আছে।’

ডাটাবেজের আওতায় আসার বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ফরম ফিলাপ করতেই হবে। এজন্য আমি সারা দেশে ঘুরছি। গিয়ে গিয়ে বলি আপনারা ফিলআপ করে পাঠান। অনেকে আগ্রহী নয়-এটাও ঠিক। অনেক সম্পাদকও আগ্রহী নন। কারণ ভেতরে সমস্যা আছে, অসুবিধা আছে তাদের। এজন্য তারা চান না। এটা আমরা বুঝি।’ এর গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রতি মাসে সভা হয়। কতটি আবেদন এলো সে তথ্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যায়। তাই বলছি, যারা পাঠাননি তারা পাঠান। না হলে একসময় যদি আমরা বলি আর নেবো না। তাহলে কিন্তু বাদ পড়ে যাবেন। আমি এটা চাই না।’

এই কাজে সফল হবেন বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা করবই। এটার পেছনে রাষ্ট্রীয় শক্তি আছে আমাদের সঙ্গে। বার কাউন্সিলের গেলে যেমন আইনজীবী কত জন জানা যায়, বিএমএতে গেলে ডাক্তার কত জন জানা যায়। তেমনি আগামীতে সাংবাদিক কত জন সে তথ্য পাওয়া যাবে। এটা পাওয়া গেলে রাষ্ট্রীয় কাজেও সুবিধা হবে। কাজেও সুবিধা হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এটা আজ হোক কাল হোক সফল হবেই।’