কবির আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ
নভেম্বর ২৯, ২০২২
০৬:৪২ পূর্বাহ্ন
আপডেট : নভেম্বর ২৯, ২০২২
০৬:৪২ পূর্বাহ্ন
চলতি বছরের ভয়াবহ বন্যায় সিলেটের সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার একটি সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ। বন্যা যেমন মানুষের বাড়ি-ঘর, কৃষি-গবাদিপশু সবকিছুর ক্ষতি হয়েছে। তেমনি ক্ষতি হয়ে শিক্ষার্থীদের। বিশেষ করে এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন যারা। সোমবার ঘোষিত ফলাফলে তার প্রভাব ষ্পষ্ট।
এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় পাশের হার ৭৫ শতাংশ। গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৯৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। সে হিসাবে এবার মোট পাসের হার কমেছে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।
এবার উপজেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩১ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১২ জন। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় এবছর জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১৯ জন বেশি শিক্ষার্থী। পুরো উপজেলায় ২ জন দাখিল পরীক্ষার্থীসহ জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৩১ জন পরীক্ষার্থী।
উপজেলার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী শহীদ স্মৃতি টুকের বাজার হাইস্কুলেরই ১৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছেন। এই স্কুলের ২৭০ জন অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর মাঝে পাস করেছেন ২০১ জন। টুকেরবাজার স্কুলের পাসের হার ৭৪ শতাংশ। যা গত বছরের তুলনায় কয়েক শতাংশ কম।
শহীদ স্মৃতি টুকের বাজার হাইস্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক আনোয়ার আলী দৈনিক সিলেট মিরর-কে জানান, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর আমাদের এসএসসি ফলাফল খুব খারাপ হয়েছে। এ বছর ২৭০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিলেও কৃতকার্য হয়েছে ২০১ জন শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে ৬৯ জন শিক্ষার্থী। যা গত বছরের তুলনায় কয়েক গুণবেশি ‘
তিনি আরও বলেন, ‘তবে আমাদের স্কুলের জন্য ভালো খবর হচ্ছে গত বছরের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি জিপিএ ৫ পেয়েছে আমাদের শিক্ষার্থীরা। এ বছর আমাদের স্কুল কেন্দ্রের ১৫ জন মেধাবী শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে বলে আমরা আনন্দিত।’
গত বছরের তুলনায় এবছর ফলাফল খারাপ হওয়ার পিছনের কারণ সম্পর্কে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বন্যার কারণেই শিক্ষার্থীদের ফলাফল খারাপ হয়েছে বলে আমি মনে করি। বন্যার পরীক্ষাদের বই-খাতা, নোট সহ শিক্ষা সরঞ্জাম নষ্ট হয়েছিল এবং বন্যার ভয়াবহতায় পরীক্ষাদের মনোবল ভেঙে পড়ায় তারা পরীক্ষা ভালো ফলাফল করতে পারে নাই।’
উপজেলার থানা সদরের বাসিন্দা হেকিম মিয়া সিলেট মিরর-কে, ‘আমার ছেলে পরীক্ষার জন্য খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিল। পরীক্ষার কয়েকদিন আগে ভয়াবহ বন্যার ফলে আমার ছেলের সেই প্রস্তুতি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বন্যার কারণে তার মনোবল হারিয়ে ফেলেছিল। বন্যার পানিতে বই ও নোট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। যার ফলে সে একটি পরীক্ষা অকৃতকার্য হয়েছে।’
তেলিখাল উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক জিয়াউর রহমান সিলেট মিরর-কে বলেন, ‘এ বছর আমাদের স্কুলের ৮৩ জন শিক্ষার্থীদের ৬৭ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে পাসের হার ৮০ দশমিক ৭২ শতাংশ। যা গত বছরের ফলাফল থেকে অনেক খারাপ। গত বছর (২০২১ সালে) ৮৩ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করেছিল ৮১ জন। ২০২১ সালে পাসের হার ছিল ৯৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ।’
গত বছর থেকে এ বছর ফলাফল খারাপ হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বন্যার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা রীতিমতো স্কুলে ক্লাস করতে পারে নাই এবং পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ভাল না থাকায় এ বছর ফলাফল খারাপ হয়েছে বলে আমি মনে করছি।’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টরাও সিলেট মিরর-কে একই কথা জানান। তারা বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবছর পাসের হার কম হলেও জিপিএ ৫ বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক।’
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জুনের প্রথমভাগে সিলেটে পানি বাড়তে শুরু করে পরবর্তীসময়ে বন্যা দেখা দেয়। মাসের শেষের দিকে বন্যা কমে গেলেও দুই সপ্তাহেরও কম সময় ফের বন্যা দেখা দেয়। সেটি জুলাই মাসের শেষ দিকে কমতে শুরু করলেও আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে ফিরতে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ লেগে যায়। ভয়াবহ বন্যার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও পাঠদান ব্যহত হয়। এর মধ্যে সরকারী নির্দেশনা বন্ধ হয় ১৯ জুন অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষা। পরবর্তীতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর শুরু হয় এসএসসি পরীক্ষা। বন্যার ভয়াবহতার কারণে প্রত্যাশিত প্রস্তুতি ছাড়াই মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেন উপজেলার শিক্ষার্থীরা।
এএফ/০৩