মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হলেন অধ্যাপক ড. জহিরুল হক

সিলেট মিরর ডেস্ক


নভেম্বর ১৮, ২০২২
০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ১৮, ২০২২
০৮:৪২ অপরাহ্ন



মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হলেন অধ্যাপক ড. জহিরুল হক

সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন উপাচার্য হলেন অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. শাকিল একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীও। মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে পদে তাঁর এই নিয়োগ লাভের মাধ্যমে শাবিপ্রবির কোনো শিক্ষার্থী প্রথমবার উপাচার্য পদে আসীন হলেন।

ড. জহিরুল হক সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার সন্তান। তাঁর আগে শাবিপ্রবিতে উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন হবিগঞ্জের আরও দুই কৃতি সন্তান। তাদের মধ্যে শাবিপ্রবির দুইবারের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ উদ্দিন  এবং শাবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হাবিবুর রহমান।

বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গৌরবের মনে করছেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি নিজের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক মেট্রোপলিটন ইউভার্সিটির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গৌরবের ব্যাপার। জহিরুল হক অত্যন্ত মেধাবী ও বিচক্ষণ একজন শিক্ষক। তিনি অনেক পরিশ্রমী। আশা করছি মেট্রোপলিটন ইউভার্সিটিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন। আমি আশাবাদী আগামীতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক শিক্ষক উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাবেন।

নতুন দায়িত্ব লাভের পর নিজের প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক জহিরুল হক বলেন, ‘মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি সিলেটের  উপাচার্য হিসেবে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাস্টিয়ান হিসেবে প্রথম বারের মত শাবিপ্রবির কোনো শিক্ষার্থী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছে। এটি আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের। তিনি আরও বলেন, আমার জানা মতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের মধ্যে আমিই সর্বকনিষ্ঠ উপাচার্য হতে যাচ্ছি। এতে নিজের মধ্যে অন্যরকম একটি অনুভূতি কাজ করছে। 

প্রসঙ্গত, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক শিক্ষকতার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর অবদান রাখছেন। শিক্ষা জীবনে তিনি কমনওয়েলথ স্কলারশিপ, ইউজিসি স্কলারশিপ, চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল, ভাইস চ্যান্সেলর মেডেলসহ বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন।

ড. জহিরুল হবিগঞ্জ জেলা সদরের শায়েস্তানগর আবাসিক এলাকায় ১৯৭৬ সালের ১২ এপ্রিল এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ১৯৯৩ সালে হবিগঞ্জ জেলা শহরের জে কে অ্যান্ড এইচ কে হাইস্কুল থেকে সাধারণ বিজ্ঞান বিভাগে স্টার মার্কসহ প্রথম বিভাগে এসএসসি ও ১৯৯৫ সালে সরকারি বৃন্দাবন কলেজ থেকে মানবিক শাখায় প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাশ করেন। পরে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিক্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড পাবলিক এ্যাফেয়ার্স বিভাগে ভর্তি হয়ে অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।  এ বিভাগ থেকে ১৯৯৮ সালে (পরীক্ষা অনুষ্ঠিত ২০০০ সাল) এ গ্রেড ও ডিস্টিংশন নিয়ে বিএসএস অনার্স ডিগ্রী লাভ করেন। বিএসএস পরীক্ষায় তার প্রাপ্ত সিজিপিএ ছিল সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। এজন্য তিনি রাষ্ট্রপতি তথা চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল লাভ করেন। একই সঙ্গে স্কুল অব সোস্যাল সায়েন্সে সর্বোচ্চ সিজিপিএ’র জন্য ভাইস-চ্যান্সেলর মেডেল ও ইউজিসি মেরিট স্কলারশিপ-২০০০ এবং বিভাগে সর্বোচ্চ সিজিপিএ প্রাপ্তির জন্য ইউনিভার্সিটি বুক মেডেল লাভ করেন। পরবর্তিতে একই বিভাগ থেকে ১৯৯৯ সালে (পরীক্ষা অনুষ্ঠিত ২০০২ সাল) ডিস্টিংশনসহ এ গ্রেড নিয়ে এমএসএস ডিগ্রী লাভ করেন। ওই শিক্ষাবর্ষে স্কুল অব সোস্যাল সায়েন্সে সর্বোচ্চ সিজিপিএ’র জন্য ভাইস-চ্যান্সেলর মেডেল ও তার বিভাগে সর্বোচ্চ সিজিপিএ প্রাপ্তির জন্য ইউনিভার্সিটি বুক মেডেল লাভ করেন। তিনি ২০০৯ সালে শাবিপ্রবি’র প্রথম কোন ছাত্র হিসেবে যুক্তরাজ্যে কমনওয়েলথ স্কলারশীপ লাভ করেন। উক্ত স্কলারশীপের অধীনে ইংল্যান্ডের লিডস বেকেট ইউনিভার্সিটি’র এপ্লাইড গ্লোবাল ইথিকস থেকে পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে মেরিট অ্যাওয়ার্ডসহ মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। ২০১২ সালে দ্বিতীয়বারের মতো কমনওয়েলথ স্কলারশীপ পেয়ে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ থেকে ২০১৮ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। 

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক শাবিপ্রবিতে বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধু হলের সহকারি প্রভোস্ট, স্কুল অব সোস্যাল সায়েন্সেস এর নির্বাহী কমিটির সদস্য, বোর্ড অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজের সদস্য, রিসার্চ ইথিক্স বোর্ডের সদস্য, সাস্ট ডিজিটালাইজেশন কমিটি টোটাল সাস্টের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যালেন্ডার মুদ্রণ ও প্রকাশনা কমিটির সদস্য, কেন্দ্রিয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য (২০২০-২১ ও ২০২১-২২), জার্নাল অব পলিটিক্স অ্যান্ড এডমিনিস্ট্রেশনের এক্সিকিউটিভ এডিটরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন ছাড়াও দেশী-বিদেশী জার্নালে জহিরুল হক শাকিলের এ যাবত ৩০ টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রকাশিত গ্রন্থ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পঠিত হয়। তিনি যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজের ইন্সটিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ ও সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্টিত কনফারেন্সে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যূতে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় লেখালেখি করেন। 

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ পলিটিক্যাল সায়েন্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হবিগঞ্জ, হবিগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতাল, হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতি, সিলেটস্থ হবিগঞ্জ সমিতি, হবিগঞ্জ নজরুল একাডেমি, সুরবিতান ললিতকলা কেন্দ্রের আজীবন সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের একজন সংগঠক।

তিনি ছাত্রজীবনে খেলাধুলা, সংস্কৃতি, স্কাউটিং ও বিএনসিসিতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।  তিনি ১৯৯৩ সালে চতুর্দশ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক স্কাউট সমাবেশে জে কে অ্যান্ড এইচ কে হাইস্কুল স্কাউট দলের ও ১৯৯৫ সালে চতুর্দশ জাতীয় রোভার মুটে সরকারী বৃন্দাবন কলেজ রোভার দলের নেতৃত্ব দেন। কমনওয়েলথ স্কলারশীপ এলামনাই এসোসিয়েশন উইকে, লিডস বেকেট ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশন, সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন এলামনাই এসোসিয়েশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক শাবিপ্রবির পলিটিক্যাল স্টাডিজ এলামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি, হবিগঞ্জ জীবন সংকেত নাট্যগোষ্টীর নির্বাহী সদস্য, সিলেট সন্ধানী নাট্যচক্র ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা হবিগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব ইউনেস্কো ক্লাব ইন বাংলাদেশ এর হবিগঞ্জ জেলা শাখার প্রেসিডেন্ট ও হবিগঞ্জ জার্নালিস্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

তিনি ২০১২ সালের জানুয়ারীতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌথ উদ্যাগে এবং সিলেট মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটি ও সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘আদিবাসী জনগোষ্টী ও সিলেটের পরিবেশ’ শীর্ষক জাতীয় কনভেনশনের সদস্য সচিব ছিলেন। তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের ঘোষনাপত্র সিলেটের প্রান্তিক জনগোষ্টী ও বিপন্ন পরিবেশ রক্ষায় একটি রূপরেখা হিসেবে কাজ করছে। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যূতে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন।


এএফ/০৭