সিলেট মিরর ডেস্ক
অক্টোবর ১২, ২০২২
০৯:২৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ১২, ২০২২
০৯:২৫ পূর্বাহ্ন
ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে র্যাব নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে ‘হিজরতের নামে ঘরছাড়া’ যে ৩৮ জনের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেছে, সেখানে আছে সিলেটের ৫ তরুণের নামও। এই পাঁচ তরুণের স্বজনদের দাবি নিখোঁজের পর থেকে তাদের সঙ্গে পরিবারের আর যোগাযোগ হয়নি। তাদের সন্ধানে পুলিশ ও র্যাব কাজ করছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর গ্রামের শেখ আহমদ মামুন (২৩), মো. হাসান সায়িদ (২৪), সাইফুল ইসলাম ওরফে তুহিন (২৪) ও মো. সাদিকুর রহমান (৩৩)। একই দিন নিখোঁজ হন সিলেট শহরের শিবগঞ্জ গোলাপবাগ এলাকার বাসিন্দা তাহিয়াত চৌধুরী (১৮)।
নিখোঁজ তরুণদের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘নিখোঁজ’ পাঁচজনের মধ্যে একজন একটি জিমের প্রশিক্ষক। একজন মাদ্রাসা থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করেছেন। অন্য তিন তরুণের মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন, অন্যজন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন। একজন মাদ্রাসার পাঠ অসমাপ্ত রেখে নিরাপত্তাকর্মীর পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। নিখোঁজ তরুণেরা জঙ্গিবাদে জড়িত হয়েছেন বলে র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে যে তথ্য জানানো হয়েছে, এ সম্পর্কে তরুণদের স্বজনেরা অবহিত নন বলেও দাবি করেছেন।
তাহিয়াতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত বছর সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাণিজ্য বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। নিখোঁজের দিন উপশহর এলাকায় যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে তাহিয়াত আর ফেরেননি। তিন ছেলের মধ্যে তাহিয়াত সবার ছোট। তাহিয়াতের নিখোঁজের ঘটনায় জিডি হওয়ার পর থেকে পুলিশ সন্ধান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগরের শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান। তবে তার কোনো খোঁজ মেলেনি বলেও জানান তিনি।
নিখোঁজ সাদিকুর রহমান তিন বছর ধরে দয়ামীর বাজারের একটি জিমের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছিলেন। স্থানীয় এক মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ২০১৮ সালে বিয়ে করেন সাদিকুর। তার চার বছরের এক মেয়েও রয়েছে। পরিবারসূত্রে জানা গেছে, তাবলিগের কথা বলে তিনি ঘর ছাড়েন। এক সপ্তাহ পরও যখন ফেরেননি, তখন থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি করা হয়।
তাবলিগের কথা বলে ঘর ছেড়েছিলেন মো. হাসান সায়িদও। তিনি ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসা থেকে টাইটেল পাস করেন। এরপর বাড়িতে এসে পাথরের ব্যবসা শুরু করেন। তবে করোনা পরিস্থিতিতে বাড়িতে বেকার দিন কাটাচ্ছিলেন। নিখোঁজের পাঁচ মাস আগে তিনি বিয়ে করেন। নববধূকে রেখেই ঘরছাড়া হন তিনি।
সিলেটের লিডিং ইউনিভাসির্টিতে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিষয়ে দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারে পড়াকালীন নিখোঁজ হন শেখ আহমদ মামুন।
নিখোঁজ সাইফুল ইসলাম স্থানীয় দারুল কোরআন মাদ্রাসায় টাইটেল পর্যন্ত পড়লেও চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেননি। এরপর পরিবারের সদস্যরা তাকে স্থানীয় একটা গ্যারেজে পাহারাদারের চাকরিতে নিযুক্ত করেন। নিখোঁজের আগপর্যন্ত সেখানেই কাজ করছিলেন।
ওসমানীনগর থানার ওসি এস এম মাঈন উদ্দিন বলেন, চার তরুণ একসঙ্গে নিরুদ্দেশ হয়েছেন বলে তাদের পরিবারের সদস্যরা ধারণা করছেন। তবে পুলিশ তাদের সন্ধান চালানো অব্যাহত রেখেছে। এখনো তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এর আগে সোমবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ তরুণদের তালিকা প্রকাশ করে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানিয়েছিলেন, এখন পর্যন্ত তারা ৫৫ জনের অধিক তরুণের তথ্য পেয়েছেন যারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। এরা সর্বশেষ দুই বছর আগ থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া শুরু করেছে। সর্বশেষ দেড়মাস আগে কুমিল্লা থেকে সাত তরুণ নিরুদ্দেশ হয়।
র্যাবের মুখপাত্রের ভাষ্য, নিরুদ্দেশ তরুণদের নাম-ঠিকানা আমরা পেয়েছি। এদের মধ্যে ৩৮ জন স্বেচ্ছায় হিজরতে রয়েছে। তাদের বিস্তারিত তথ্য আমরা পেয়েছি। তাদের বিষয় আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নিরুদ্দেশ তরুণদের কারও কারও পরিবার জানে, সন্তান বিদেশে গেছে। মাঝেমধ্যে অর্থও পাঠায়। আসলে সে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে রয়েছে। এই জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা দেশের পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ নিয়েছে বলেও জানান তিনি। এর আগে কুমিল্লা থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া এক ইমাম, তিন শিক্ষার্থীসহ পাঁচ জনকে গত রোববার রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। তারা নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) এর সদস্য। জঙ্গি সংগঠনটি বিভিন্ন ধরনের চাঁদা আদায় করে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। কিছু বিচ্ছিন্ন সংগঠনও তাদের অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছে বলেও জানান তিনি।
এসই/১০