নিজস্ব প্রতিবেদক
সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২
১০:৪০ অপরাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২
১২:০১ পূর্বাহ্ন
যুক্তরাজ্য প্রবাসী সিলেটের সাত উদ্যোক্তাকে ঢাকার একটি সভা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে অভিযোগ উঠেছে, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বে তাদের গ্রেপ্তার করানো হয়েছে। লন্ডন থেকে দেশে ফেরা ওই প্রবাসীদের গত ২১ সেপ্টেম্বর হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের ঢাকার মতিঝিলস্থ প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার বাসিন্দা জামাল মিয়া ও তার ভাই কামাল মিয়া, বিশ্বনাথের আবদুল আহাদ ও তার ভাই আবদুল হাই, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতকের জামাল উদ্দিন এবং সিলেট নগরের উপশহর এলাকার আবদুর রাজ্জাক। এছাড়া গ্রেপ্তার আবদুর রব নামের অন্য ব্যক্তির ঠিকানা জানা যায়নি। গ্রেপ্তার জামাল মিয়া ‘হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান ও বাকি সবাই পরিচালক। গ্রাহকের পলিসির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে অভিযোগ উঠেছে সিলেট বিভাগের এই ৭ প্রবাসী ব্যবসায়ী দেশে ফেরায় ক্ষুব্ধ হয়ে গোপনে পুলিশকে খবর দিয়ে তাদের ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই যুক্তরাজ্যের নাগরিক ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন আড়পাড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের বীমা গ্রাহকদের পলিসির টাকা আত্মসাৎ করে প্রতারণামূলকভাবে বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করা হয়। আদালত মামলাগুলো আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরোয়ানার কপি ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হলে পরোয়ানা তামিলের জন্য মতিঝিল থানায় পাঠানো হয়। আদালতের পরোয়ানা পেয়ে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
এদিকে, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান ও ছয় পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা হলেও রহস্যজনক কারণে অভিযুক্ত করা হয়নি চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপকসহ অন্য কোনো পদস্থ কর্মকর্তাকে। এ নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।
হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স সূত্র জানায়, কোম্পানিটির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ এবং বীমা দাবির টাকা মিটিয়ে না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে অনেক দিনের। এছাড়া ব্যবস্থাপনায় নানা অনিয়ম রয়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির ব্যাপারে বিভিন্ন রকমের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে গ্রেপ্তারকৃত ওই প্রবাসী পরিচালকরা দেশে থাকা পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা কমিটিকে বারবার তাগাদা দিলেও তারা কোনো উদ্যোগ নেননি। এ জন্যই তারা দেশে ফেরায় ক্ষুব্ধ হয়ে গোপনে পুলিশকে খবর দিয়ে তাদের ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি এ মামলায় দেশে থাকা কোনো পরিচালক বা ব্যবস্থাপনা কমিটির কাউকেই আসামি করা হয়নি।
গ্রেপ্তারের বিষয়ে মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসির আরাফাত খান বলেন, ‘গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের একটি মামলায় তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি ছিল। তারা দেশের বাইরে থাকায় গ্রেপ্তার করা যায়নি। দেশে ফেরার তথ্য পেয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।’
জামিন না হওয়ায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রেপ্তারকৃত একজনের স্ত্রী বলেন, ‘কোম্পানির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণেই এমনটি হয়েছে। দেশে থাকা কোম্পানির কর্মকর্তারা এই দুর্নীতি ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু তাদের এই অনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে যাতে প্রবাসী উদ্যোক্তারা কোনো প্রতিকার না নিতে পারেন তাই এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এটা প্রবাসীদের স্রেফ হয়রানি করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে প্রবাসী সাতজন হয়ত মামলার বিষয়টি জানতেনও না। জানলে নিশ্চয়ই তারা এ বিষয়ে প্রতিকার নিয়েই দেশে যেতেন। শুধু প্রবাসী সাতজনকে কেন গ্রেপ্তার করা হবে? দেশে থাকা যেসব কর্মকর্তা ছিলেন তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হলো না কেন? তা থেকেই বুঝা যায় কোম্পানির অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণেই তাদের গ্রেপ্তার করানো হয়েছে।’
বিএ-০১