সিলেটের পাঁচ সড়কে বসছে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র

শুয়াইব হাসান


সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
০৪:০৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
০৪:০৩ পূর্বাহ্ন



সিলেটের পাঁচ সড়কে বসছে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র
# লামাকাজিতে স্থাপিত স্টেশন চালু হবে অক্টোবরে

নবনির্মিত সিলেট-ভোলাগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে ৬ চাকার গাড়িতে ১৫ টন এবং ১০ চাকার গাড়িতে সর্বোচ্চ ২৫ টন মালামাল পরিবহনের কথা। অথচ, প্রতিদিন দ্বিগুণ ওজন নিয়ে এ সড়কে গাড়ি চলাচল করছে। অতিরিক্ত ওজন (ওভারলোড) পরিবহনের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সড়কের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

এমন পরিণতি ঠেকাতে সিলেট-সুনামগঞ্জ, সিলেট-ভোলাগঞ্জসহ গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। সিলেট অঞ্চলে এ রকম মোট পাঁচটি কেন্দ্র স্থাপনের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। 

সওজ সূত্রে জানা গেছে, দেশে ৬ থেকে ২৬ চাকার গাড়ি দিয়ে পণ্য পরিবহন করা হয়। এ জন্য ৬ চাকার গাড়ি সর্বোচ্চ ১৫ টন, ১০ চাকার গাড়ি ২৫ টন, ১৪ চাকার গাড়ি ৩৩ টন, ১৮ চাকার গাড়ি ৩৮ টন, ২২ চাকার গাড়ি ৪১ টন এবং ২৬ চাকার গাড়িকে ৪৪ টন পর্যন্ত মালামাল পরিবহন করার পরিসীমা রয়েছে। 

এই পরিসীমা অতিক্রম হলেই গাড়িগুলোকে জরিমানা গুনতে হবে। এ জন্য সেতু ও মহাসড়কের পাশে পণ্যসহ গাড়ি পরিমাপের জন্য এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ। 

সিলেট অঞ্চলে পাঁচ এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনের মধ্যে সুনামগঞ্জ সড়কের লামাকাজিতে স্থাপিত স্টেশনটির কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ‘আগামী ১ অক্টোবর থেকে এটি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। স্টেশনটির ব্যয় ১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা।’

সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় এই স্টেশনে চারতলা ফাউন্ডেশনের ওপর দুতলা বিল্ডিং নির্মাণ, ভ‚মি উন্নয়ন ১৩৮০৯৬১.৮০ ঘনমিটার, রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ ১ লাখ ২৫ হাজার ৯৩৮ বর্গমিটার, ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট নির্মাণ ৩ হাজার ৭৯০ বর্গমিটার, আরসিসি ড্রেন নির্মাণ ১৫ হাজার ৮০০ মিটার। 

দ্বিতীয় এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনটি বসানো হচ্ছে সিলেটের ভোলাগঞ্জ সড়কে। সড়কের ২৮তম কিলোমিটার এলাকায় এটি স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সওজ। জমি নির্ধারণ করে এরই মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরুও হয়েছে। যদিও সিলেটের বিমানবন্দরের নিকটবর্তী সালুটিকর এলাকায় এটি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরে, স্থানীয়দের আপত্তিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের হস্তক্ষেপে সেখানে স্টেশন স্থাপন থেকে সরে আসে সওজ। স্টেশনটির নির্মাণ ব্যয় ১৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান। 

সিলেটের তৃতীয় এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন হচ্ছে শেওলা-সুতারকান্দি সড়কের তৃতীয় কিলোমিটার এলাকায়। ১৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি স্থাপনের জন্য ভ‚মি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। 

চতুর্থ এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন হবে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের দরবস্ত এলাকায়। ঢাকা থেকে তামাবিল পর্যন্ত চারলেন (দুই সার্ভিস লেনসহ ৬ লেন) মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২৬১তম কিলোমিটার এলাকায় এটি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই স্টেশনটি নির্মাণেও ভ‚মি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। 

আরও একটি লোড কন্ট্রোল স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সওজের। সিলেটের বিমানবন্দর-বাদাঘাট বাইপাস চারলেন সড়কের প্রস্তাবিত ডিপিপিতে এটি রয়েছে। এটি স্থাপনে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। 

সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মহাসড়কে অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি জাতীয় মহাসড়কগুলো অতিরিক্ত লোড থেকে রক্ষা পাবে এতে সড়কের স্থায়ীত্বকাল বাড়বে। বর্তমানে যে সড়কের উপর দিয়ে ১০ টন ক্ষমতা সম্পন্ন যানবাহন চলাচলের কথা, কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় দ্বিগুণ থেকে আড়াইগুণ বেশি পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। এতে সড়কগুলোর স্থায়িত্ব কমছে। এতে মহসড়কের রক্ষাণাবেক্ষণ ব্যয় প্রতি বছরই বাড়ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এ অবস্থার অবসান হবে।’

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর সারাদেশে কয়েকটি এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপনের কাজের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে সরকার। টেকসই, নিরাপদ ও ব্যয় সাশ্রয়ী (পরিবহন ব্যয় ও সময়) সড়ক অবকাঠামো এবং সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে এসব এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন এর লক্ষ্য। 

প্রকল্পের আওতায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লা সড়ক জোনে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। 

‘সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ১৬৩০ কোটি ২৭ লাখ ৯১ হাজার  টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন মেয়াদে গত ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। 

সে প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রকল্পের প্রশাসনিক আদেশ জারি করা হয়। প্রকল্পটির ক্রয় পরিকল্পনায় পূর্ত কাজের জন্য দুটি প্যাকেজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে বিবেচ্য প্যাকেজ নম্বর-পিডবি¬উ-০১ এর প্রাক্কলিত দাম ৩১০ কোটি ৭০ লাখ ৭২ হাজার টাকা এবং অনুমোদিত দাপ্তরিক প্রাক্কলিত দাম ৩০৭ কোটি ৫০ লাখ ৬২ হাজার ৮৩৯ টাকা।

আরসি-০১