দেড় বছর পর ঘণ্টা বাজবে সিলেটের স্কুল-কলেজে

নিজস্ব প্রতিবেদক


সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১
০৬:০৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১
০৬:০৩ পূর্বাহ্ন



দেড় বছর পর ঘণ্টা বাজবে সিলেটের স্কুল-কলেজে
# প্রস্তুত স্কুল-কলেজ # আনন্দের সঙ্গে রয়েছে উদ্বেগও

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে প্রায় ১৭ মাস বন্ধ থাকার পর আজ রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) খুলছে স্কুল-কলেজ। ৫৪৪ দিন পর সারাদেশের সঙ্গে সিলেটের স্কুলগুলোতেও বাজবে ক্লাসের ঘণ্টা। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছেন। দীর্ঘদিন পর প্রতিষ্ঠান খোলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক সবার মধ্যেই রয়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। তবে উৎসাহের সঙ্গে করোনা নিয়ে উদ্বেগও আছে অভিভাবকদের। 

শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সিলেটের স্কুল-কলেজ ঘুরে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কর্মব্যস্ত দেখা যায়। কেউ বেঞ্চ-টেবিল পরিষ্কার করছেন, কেউ এগুলোতে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন, কেউ আবার স্কুল প্রাঙ্গণে টাঙাচ্ছেন সচেতনতামূলক ব্যানার। প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সামনে প্রবেশ মুখে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা সম্বলিত ব্যানার ঝুলছে। প্রবেশ মুখে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিতে লাল রঙ দিয়ে গোল দাগ দেওয়া হয়েছে। ভেতরেও মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে রয়েছে প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার। কোনো বিদ্যালয়ে ক্লাসরুমের সামনে সাবান পানি, কোথাও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হয়েছে। ক্লাসরুমে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের বসার জায়গাও চিহ্নিত করা হয়েছে। 

স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা জানান, তারা পুরোপুরি প্রস্তুতি। স্বাস্থ্যবিধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। তাপমাত্রা মেপে সব শিক্ষার্থীকে প্রতিষ্ঠানে ঢুকানো হবে। এছাড়া শিক্ষা অধিদপ্তরের রুটিন মেনে ক্লাস পরিচালনা করা হবে। 

দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফেরার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা বেশি। সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছামিউর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘অনেক দিন পর সহপাঠীদের সঙ্গে বসে ক্লাস করব। শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা হবে, ক্লাসরুমের স্বাদ পাব। সব মিলিয়ে খুব ভালো লাগছে।’

শিক্ষার্থীদের মতো অভিভাবকরাও স্কুল কলেজ খোলায় আনন্দিত। দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা মোবাইল গেমস ও অন্যান্য কাজে জড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় তারা পড়ালেখায় ফিরে আসবে বলে আশা তাদের। তবে আনন্দের সঙ্গে করোনা নিয়ে উদ্বেগও আছে অভিভাবকদের মধ্যে। 

আর্দশ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহফুজ হোসেনের বাবা কবির হোসেন বলেন, ‘স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা প্রায় বন্ধই ছিল। ফলে ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা ছিল। দীর্ঘদিন পর আবারও স্কুল খোলায় নিজেরও ভালো লাগছে। তবে করোনা যেহেতু একেবারে কমেনি, তাই এই আনন্দের সঙ্গে ছেলেকে নিয়ে চিন্তাও হচ্ছে।’

আরেক অভিভাবক রহিমা খানম বলেন, ‘আমরা বড়রাও অনেক সময় স্বাস্থ্যবিধি ঠিকমতো মানতে পারি না। আর বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তা তো আরও কঠিন। তাই কিছুটা ভয় হচ্ছে। তবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর স্কুল খুলছে, তাতে আনন্দও আছে।’

সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির খান সিলেট মিররকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস করতে পারব বলে আমরা খুব খুশি। ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা আমাদের মূল লক্ষ্য। বিদ্যালয়ে আইসোলেশন রুম, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সচেতনতামূলক ব্যানার টানানো সব কাজই শেষ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামীকাল (রবিবার) আমাদের চারটি শ্রেণির ক্লাস হবে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে চার শ্রেণিকে ১৮টি সেকশনে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি সেকশনের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময়ে আধাঘণ্টা ব্যবধান থাকবে। তবুও কেউ যদি করোনা আক্রান্ত হয় তাহলে যে সেকশনের শিক্ষার্থী আক্রান্ত হবে আমরা কিছুদিনের জন্য সেই সেকশনের ক্লাস বন্ধ রাখব।’

অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম বলেন, ‘সব শিক্ষার্থীকে তাপমাত্রা মেপে স্কুলে ঢুকানো হবে। কোনো শিক্ষার্থীর তাপমাত্রা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় তাহলে সে বাড়ি ফিরে যাবে। এছাড়া হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্কসহ সবধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রথমদিন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে প্রবেশ মুখ বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। ক্লাসরুমে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিতে আলাদা সেকশন তৈরি করা হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগের প্রাথমিকে প্রায় ১২ লাখ ৮৮ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়া মাধ্যমিকে ৮ লাখ ১৮ হাজার, উচ্চ মাধ্যমিক ও কলেজে ২ লাখ ৫০ হাজার এবং সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ মিলে প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। 

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক প্রফেসর মো. আব্দুল মান্নান খান সিলেট মিররকে, ‘সিলেটের স্কুল কলেজ সম্পূর্ণরুপে প্রস্তুত রয়েছে। শনিবার আমরা সিলেটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছি। প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতি আমরা যতটুক আশা করেছিলাম তার চেয়েও ভালো।’

উল্লেখ্য, করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি চলছে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, গতকাল ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি ছিল। আজ ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস শুরু হবে। প্রথম দিকে শুধু চলতি ও আগামী বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এবং প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে। বাকি শ্রেণিগুলোর ক্লাস সপ্তাহে এক দিন করে হবে। প্রাক্-প্রাথমিক স্তরের (শিশুশ্রেণি, নার্সারি, কেজি ইত্যাদি) শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস আপাতত বন্ধ থাকছে। 

এনএইচ/আরসি-০৪