সিলেটে আবাদ কম হলেও আউশের বাম্পার ফলন

শুয়াইব হাসান


সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১
০৪:১২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১
০৪:১২ পূর্বাহ্ন



সিলেটে আবাদ কম হলেও আউশের বাম্পার ফলন

সিলেটে এ বছর দুই লাখ ৭ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের কথা থাকলেও সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় ১৬ ভাগ লক্ষ্য পূরণ হয়নি। তবে, এবার বড় ধরনের বন্যা না হওয়ায় ফসলহানি থেকে রক্ষা পেয়েছেন কৃষকরা এবং ফলনও ভালো হয়েছে। 

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে আবাদকৃত জমির ৯৫ ভাগ ফসল ঘরে তুলেছেন কৃষকরা। হেক্টর প্রতি দুই দশমিক ৭০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে; যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এতে কৃষকরাও খুশি। 

গত বছর কেবল মৌলভীবাজার জেলায় ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়। কিন্তু, এবার আবাদ হয়েছে মাত্র ৪৭ হাজার ১৪৭ হেক্টর জমিতে। এবার মৌলভীবাজারে ৮৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। 

তবে, উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকদের হতাশা কিছুটা কেটেছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া গ্রামের কৃষক মনির মিয়া জানান, ‘এপ্রিল-মে-জুন মাসে বৃষ্টি ঠিকমতো না হওয়ায় তারা পর্যাপ্ত জমি চাষাবাদ করতে পারেননি। তবে, জুলাই-আগস্টে নিয়মিত বৃষ্টি হওয়ায় এবার ভালো ফলন হয়েছে। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়েছে এবং ফলন ভালো হয়েছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, এবার সিলেট বিভাগের চার জেলায় দুই লাখ ৭ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্য ছিল। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে এক লাখ ৭৪ হাজার ৪৭১ হেক্টর জমিতে। 

সিলেট জেলায় লক্ষ্য ছিল ৭৮ হাজার ৫৩০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৬১ হাজার ৯৫০ হেক্টরে। যা সিলেট বিভাগের সর্বনি¤œ। এ জেলায় মাত্র ৭৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে। 

মৌলভীবাজারে ৫৬ হাজার ৫৯৩ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ৪৭ হাজার ১৪৭ হেক্টর, হবিগঞ্জে ৫৩ হাজার ৩৪০ হেক্টরের মধ্যে আবাদ হয়েছে ৪৬ হাজার ৩০১ হেক্টরে এবং সুনামগঞ্জে ১৯ হাজার ৩৫৭ হেক্টরের মধ্যে আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৯৯৫ হেক্টর জমি। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সুনামগঞ্জে ৯৮ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং হবিগঞ্জের অর্জন ৮৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। 

এই মৌসুমে বিভাগে হাইব্রিড জাতীয় ধানের আবাদ না হলেও উফশি জাতীয় ধানের আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। আবাদ হওয়া ১ লাখ ৭৪ হাজার ৪৭১ হেক্টরের মধ্যে ১ লাখ ৭১ হাজার ৯৮৫ হেক্টরই উফশি। স্থানীয় জাতের আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৪২৪ হেক্টরে। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ হয়েছে মাত্র ৪৫ হেক্টর জমিতে। 

কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অন্যান্য বছরের মতো এবারও হেক্টরপ্রতি ২ দশমিক ৭৩ মেট্রিকটন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকে। তবে, সেটি সবসময় পূরণ হয় না। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে ধানের মান নষ্ট হয়। উৎপাদন ব্যাহত হয়। তবে, এবার যে পরিমাণ আবাদ হয়েছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। 

সিলেট জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘আউশ ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে। এবার বন্যামুক্ত এবং আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। হেক্টর প্রতি উৎপাদনের হারও অন্য বছরের চেয়ে বেশি।’

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর মে মাস পর্যন্ত বছরে যে পরিমান বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল তা থেকে ৫২ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে সিলেটে। এপ্রিল মাসে সিলেটে ১৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। অথচ, এই সময়ে ৫০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হবার কথা ছিল। আর মে মাসে সিলেটে ৫৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হবার কথা থাকলেও বৃষ্টি হয় ৩০০ মিলিমিটার বা তারচেয়ে কিছুটা বেশি। আউশ আবাদ শুরুর দিকে বৃষ্টি ঠিকমতো না হওয়ায় বিপাকে পড়েন কৃষকরা। পানি সংকটে বীজতলা প্রস্তুত করা যায়নি। 

তবে, জুলাই ও আগস্টে নিয়মিত বৃষ্টির দেখা মিলে। আগস্টের ৩০ দিনই বৃষ্টি হয়। আবহাওয়া অফিস একমাসে ৯১৩ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে। তবে, বড়ধরনের বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এ কারণে ফলন হয় ভালো এবং কৃষকরা আনন্দের সঙ্গে ফসল ঘরে তুলছেন। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৫ লাখ ৭০ হাজার ৬০৯ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের কথা ছিল। আবাদ কম হলেও ফলন ভালো হওয়ায় তারা আশা করছেন ৪ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিকটন চাল উৎপাদনের। 

আরসি-০১