সিলেটে চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক


সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২১
০৪:২২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২১
০৪:২৪ পূর্বাহ্ন



সিলেটে চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

করোনা সংক্রমণের কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে যাচ্ছে। সিলেটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, আইসোলেশন কক্ষ প্রস্তুতসহ শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। 

জানা গেছে, করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি চলছে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি আছে। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস শুরু হবে। প্রথম দিকে শুধু চলতি ও আগামী বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এবং প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস হবে প্রতিদিন। বাকি শ্রেণিগুলোর ক্লাস সপ্তাহে এক দিন করে হবে। প্রাক্-প্রাথমিক স্তরের (শিশুশ্রেণি, নার্সারি, কেজি ইত্যাদি) শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস আপাতত বন্ধ থাকছে। এমন পরিস্থিতিতে দেড় বছর ধরে শিক্ষাকার্যক্রম চালুর প্রস্তুতি নিতে স্কুল-কলেজগুলোকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদ্বুদ্ধ করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচ্ছন্ন করাসহ মোট ১৯ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

সিলেটের বিভিন্ন বিদ্যালয় ও কলেজে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই প্রস্তুত। এখন চলছে শেষ মুহ‚র্তের কাজ। কোনো প্রতিষ্ঠানে ক্লাসরুম, লাইব্রেরি ধোয়া-মোছার কাজ চলছে। কোনো প্রতিষ্ঠানে আইসোশেলন কক্ষের শেষ মুহ‚র্তের কাজ চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে  ব্যস্ত সময় পার করছেন। সর্বত্র চলছে এক ধরনের উৎসাহ-উদ্দীপনা। 

প্রস্তুতির বিষয়ে নগরের কালীঘাটস্থ সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির খান সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমরা শতভাগ প্রস্তুত। এখন ক্লাসরুম পরিষ্কারের কাজ চলছে। বুধবার বিদ্যালয়ের সামনে কোভিড-১৯ এ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের করণীয় সম্পর্কিত একটি ব্যানার টানানো হবে। এছাড়া সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান খোলার দিন থেকে প্রবেশ ফটকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র থাকবে। এছাড়া ক্লাসরুমে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে একটি সেকশনকে দুইভাবে ভাগ করা হবে। আর আমাদের বিদ্যালয়ে হাসপাতাল থাকায় আলাদা করে আইলোশেন কক্ষ তৈরি করার প্রয়োজন হচ্ছে না।’


নগরের জিন্দাবাজারস্থ অগ্রগামী বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। যেহেতু এর আগে ফেব্রুয়ারিতে একবার প্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, তাই আমাদের এখন আর নতুন করে খুব বেশি প্রস্তুতি নিতে হয়নি। বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র, হাত ধোয়ার স্থান, ক্লাসে ক্লাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা, আইসোলেশন কক্ষের প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সবকিছুই আমরা রেখেছি। শারীরিক দূরুত্ব নিশ্চিতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দেখে আমরা প্রতিটি সেকশনকে আলাদা করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু অনেক দিন পর শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরছে তাই প্রথমদিন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে প্রবেশ পথ থেকে ক্লাসরুম পর্যন্ত বেলুন বা অন্যকিছু দিয়ে সাজানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

সিলেট এইডেড স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. শমশের আলী বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করতে যে ধরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আমরা ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমরা প্রতিটি ক্লাসে ২০ জনের বেশি বসাবো না। প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করতে ক্লাসে ক্লাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করব।’

সিলেট এমসি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সালেহ আহমদ সিলেট মিররকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য আমরা শতভাগ প্রস্তুত। আমাদের কলেজটি মডেল কলেজ। আমরা কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি আগামী ১১ সেপ্টেম্বর বিভাগের প্রায় ৮০ জন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ তা দেখতে আসবেন। আমরা আগেই প্রস্তুতি নিয়েছি কারণ বুধবার থেকে মাস্টার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষাও শুরু হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম দিন দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আসবে। আগে তাদের দুটি ক্লাসরুমে বসানো হত। এখন চারটি ক্লাসরুমে বসানো হবে। প্রথমদিন তাদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানাব। আর অনেকদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মেন্টাল হেলথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা পূরণের ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব।’


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগে প্রাথমিকে প্রায় ১২ লাখ ৮৮ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়া মাধ্যমিকে ৮ লাখ ১৮ হাজার, উচ্চ মাধ্যমিক ও কলেজে ২ লাখ ৫০ হাজার এবং সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ মিলে প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।  

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক প্রফেসর মো. আব্দুল মান্নান খান সিলেট মিররকে বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা ইতোমধ্যে সিলেটের সব বিদ্যালয় ও কলেজে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া সব প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতি আমরা যাচাই-বাচাই করে দেখব।’

শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সব স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি নিতে ১৯ দফা নির্দেশনা দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশ মুখসহ অন্যান্য স্থানে কোডিড-১৯ অতিমারি সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে করণীয় বিষয়গুলো ব্যানার বা অন্য কোনো উপায়ে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশ পথে সব শিক্ষক-কর্মচারী শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের মাধ্যমে নিয়মিত তাপমাত্রা মাপা ও তা পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা করতে হবে, শিক্ষার্থীদের ভিড় এড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানের সবগুলো প্রবেশমুখ ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা। যদি কেবল একটি প্রবেশমুখ থাকে সেক্ষেত্রে একাধিক প্রবেশমুখের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতে হবে, প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশে শ্রেণি কার্যক্রমে স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করবে এবং বাসা থেকে যাওয়া-আসা করবে সে বিষয়ে শিক্ষণীয় ও উদ্বুদ্ধকারী ব্রিফিং দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের দেওয়া ভিডিও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে, প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইসোলেশন কক্ষ হিসেবে প্রস্তুত রাখতে হবে, প্রতিষ্ঠানের সব ভবনের কক্ষ, বারান্দা, সিঁড়ি, ছাদ এবং আঙ্গিনা যথাযথভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা করতে হবে, প্রতিষ্ঠানের সব ওয়াশরুম নিয়মিত সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখা এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করতে হবে, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী এবং অভিভাবক প্রবেশের সময় স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীর সঠিকভাবে মাস্ক (সম্ভব হলে কাপড়ের মাস্ক) পরিধান করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে,  প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দ্বারা হাত ধোয়ার এমন ব্যবস্থা করা যাতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ঢোকার আগে সবাই সাবান দিয়ে হাত ধুঁতে পারে, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে পারস্পারিক তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ, ড্রেন ও বাগান যথাযথভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা এবং কোথাও যাতে পানি জমে না থাকে তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে, প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা নিরূপণ করতে হবে, প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে, প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত মেরামত, বৈদ্যুতিক মেরামত এবং পানি সংযোগজনিত মেরামত সম্পন্ন করতে হবে, প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের সঙ্গে সভা করে এতদসংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

এনএইচ/আরসি-০১