'বিয়ে পাগল' জিল্লুরের বিচার চান স্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক


সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২১
১২:৪৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২১
১২:৪৩ পূর্বাহ্ন



'বিয়ে পাগল' জিল্লুরের বিচার চান স্ত্রী

জিল্লুর রহমান

জিল্লুর রহমান থাকেন প্রবাসে। করেছেন একাধিক বিয়ে। বিভিন্ন সময়ে বিয়ে করা একেক স্ত্রীকে নিয়ে একেক স্থানে গোপনে বসবাস করেন তিনি। এই 'বিয়ে পাগল' জিল্লুর রহমান (৪৮) সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ান বাজার ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামের ছোয়াব আলীর ছেলে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১০ এপ্রিল ১০ হাজার পাউন্ড দেনমোহরে ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের এক নারীকে যুক্তরাজ্যে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন জিল্লুর। জিল্লুরের স্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আমাকে না জানিয়ে আমার স্বামী বাংলাদেশে যান। এরপর আমার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরবর্তী সময়ে দেশে থাকা স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পারি আমার স্বামী বালাগঞ্জের বাসিন্দা রাব্বিন জান্নাত নামের এক মেয়েকে গোপনে বিয়ে করেছেন।

জিল্লুরের বিরুদ্ধে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও গোপনে একাধিক বিয়ের বিষয়টি উল্লেখ করে সিলেটের ডিআইজি কার্যালয়ে ‘প্রবাসীকল্যাণ সেল শাখায়’ লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেছেন তার স্ত্রী। ওই অভিযোগপত্রে জিল্লুরকে বহুগামী, পরনারীতে ও বিকৃত যৌনাচারে আসক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জিল্লুরের স্ত্রীর প্রেরিত অভিযোগ তদন্ত করছেন সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) রফিকুল ইসলাম। সম্প্রতি তদন্ত কর্মকর্তার নিকট লিখিত বক্তব্য প্রেরণ করেছেন ভুক্তভোগী ওই নারী। এর আগে আইনজীবীর মাধ্যমে চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে জিল্লুরের গ্রামের বাড়ি ও যুক্তরাজ্যের ঠিকানায় লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করা হলেও তিনি নোটিশের জবাব দেননি।

জিল্লুরের স্ত্রীর অভিযোগ, এ সংক্রান্ত বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে জিল্লুর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। প্রবাসীকল্যাণ সেলে দেওয়া অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তাকে জিল্লুর ম্যানেজ করেছেন। এজন্য তদন্ত কর্মকর্তা কালক্ষেপণ করে রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছেন। দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই।

জিল্লুরের বিষয়ে অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, খোলস পাল্টে জিল্লুর এখন যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা সেজেছেন। নিজ এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছবি দিয়ে বড় বড় তোরণ নির্মাণ ও বিলবোর্ড সাঁটিয়েছেন। রাব্বিনকে জিল্লুরের কাছে বিয়ে দেওয়ার বিষয়টি রাব্বিনের পিতা নূরুল ইসলাম তদন্ত কর্মকর্তার নিকট অস্বীকার করেছেন। তবে অনুসন্ধানকালে জিল্লুর-রাব্বিনের গোপন বিয়ের সত্যতা মিলেছে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের ছায়াতলে থেকে কথিত স্ত্রী রাব্বিনকে নিয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা সদর এলাকার একটি বাসায় বসবাস করছেন তিনি।

জিল্লুরের স্ত্রীর প্রেরিত লিখিত অভিযোগের কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে বিয়ের পর জিল্লুর স্ত্রীর বাসায় থাকলেও তাকে ভরণ-পোষণ দিতেন না। উল্টো নিজের প্রয়োজন এবং তার মা-ভাইয়ের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে বিভিন্ন সময়ে স্ত্রীর কষ্টার্জিত কয়েক হাজার পাউন্ড হাতিয়ে নিয়েছেন। দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা এখনও অপরিশোধিত। পরবর্তী সময়ে জিল্লুর দেশে এসে দুই মাস অবস্থান করে যুক্তরাজ্যে চলে যান। এরপর তার স্ত্রী অবাক বিস্ময়ে অনুধাবন করেন, জিল্লুর পরনারীতে আসক্ত। এর আগে ২০০৬ সালের ৩ ডিসেম্বর জিল্লুর তার ১ম স্ত্রী ব্রিটিশ নাগরিক আয়শা রহমান আশা বিবিকে তালাক দেন। পরে আশা বিবি দেশে গিয়ে তার আপন ফুপাতো ভাইকে বিয়ে করে যুক্তরাজ্যে চলে যান। তালাক দেওয়া ১ম স্ত্রীর সঙ্গে এখনও স্বামী-স্ত্রীর মতো চলাফেরা করছেন জিল্লুর। এমনকি স্ত্রীকে পাশে রেখে বাংলাদেশে অসংখ্য মেয়ের সঙ্গে ফোনে ব্যস্ত থাকতেন জিল্লুর। ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর জিল্লুর দেশে এসে কিছুদিন কাটিয়ে যুক্তরাজ্যে চলে যান। তখন রাব্বিন জান্নাত ও ঢাকার কথিত এক নারীকে বিয়ে করার প্রমাণ পান জিল্লুরের স্ত্রী। স্বামীর মোবাইলে দেখতে পান দুই মেয়েকে বিয়ে করার ছবি ও বিয়ে সংক্রান্ত অসংখ্য বার্তা। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে জিল্লুর স্ত্রীকে মারধর করেন। চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি জিল্লুর আবারও দেশে আসেন। দেশে গোপনে বিয়ে করা দুই নারী ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে মেয়েদেরকে বাসায় এনে অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছেন জিল্লুর। স্বামীর এমন কুকর্মের ঘটনা শোনে এখন তার স্ত্রী দিশেহারা হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে লিখিত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে, যথেষ্ট প্রমাণাদি থাকার পরও জিল্লুর রহমান অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেছেন, 'অভিযোগকারী উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়াধীন।' এ ব্যাপারে আর কিছু বলতে চাননি তিনি।

এ বিষয়ে অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি কথা বলতে চাননি। শুধু 'তদন্ত চলছে' বলে লাইন কেটে দেন তিনি। এরপর কয়েকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।


এসএ/আরআর-১০