বন্ধ হওয়ার পথে অর্ধশত কিন্ডারগার্টেন

বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি


সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২১
০৯:৫৫ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২১
০৯:৫৫ অপরাহ্ন



বন্ধ হওয়ার পথে অর্ধশত কিন্ডারগার্টেন

করোনার যাঁতাকলে পড়ে শিক্ষাঙ্গনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেই হারিয়েছে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো। অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মতো দেড় বছর ধরে কিন্ডারগার্টেনের দরজায়ও ঝুলছে তালা। এসব স্কুল পায় না সরকারি কোনো অনুদান। শিক্ষার্থীদের বেতনের মাধ্যমেই মেটাতে হয় কিন্ডারগার্টেনের বাড়ি ভাড়া, শিক্ষকদের বেতনসহ নানা খরচ। কিন্তু বাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় অনেক কিন্ডারগার্টেন এরই মধ্যে তল্পিতল্পা গুটিয়েছে। এর অনেকগুলো আবার আর কখনওই শিক্ষা কার্যক্রমে যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিয়ানীবাজার উপজেলায় মোট কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা ৫০টি। এসব কিন্ডারগার্টেনে প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে বলে জানা গেছে। করোনার সময়ে অনেকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। তবে মোট কতটি কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়েছে তা জানাতে পারেনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়। 

বিয়ানীবাজার উপজেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা টিটু দে বলেন, চলতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতে স্থানীয় সবক’টি কিন্ডারগার্টেন সরকারি বই নিয়েছে। তবে গত মাস পর্যন্ত একাধিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন বেতন না পেয়ে কিন্ডারগার্টেনের অনেক শিক্ষক পেশা ছেড়েছেন। তাদের কেউ কেউ আর ফিরবেন না শিক্ষকতায়। এমনকি অনেক শিক্ষার্থীও আর আসবে না কিন্ডারগার্টেনের আঙিনায়।

আরও জানা যায়, কিন্ডারগার্টেন খোলার পর এক সঙ্গে মোটা অঙ্কের ফি দিতে হবে অভিভাবকদের। এতে অনেক অভিভাবকই বিপাকে পড়বেন। তাই আগেভাগেই অনেকে তাদের সন্তানকে সরকারি স্কুলে নিয়ে ভর্তি করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, আমার স্কুলে সোয়া ২০০ জন শিক্ষার্থী ছিল। বড় ক্লাসের বেশিরভাগ শিশুই সরকারি স্কুলে ভর্তি হয়েছে। শিগগিরই স্কুল খুললে চিন্তা-ভাবনা করে দেখব স্কুল নতুন করে চালু করা যায় কি না। কিন্তু স্কুল খুলতে আরও দেরি হলে হয়তো আর খোলা সম্ভব হবে না।

শুধু স্কুলই নয়, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না শিক্ষার্থীদেরও। অনেক শিক্ষার্থীকে আগের বাসার ঠিকানায় পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের অভিভাবকরাও করছেন না যোগাযোগ। স্থানীয় এসব কিন্ডারগার্টেনের বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রী বাইরের জেলা ও উপজেলার বাসিন্দা। তাদের অভিভাবকদের চাকরি সূত্রে তারা বিয়ানীবাজারে বসবাস করত। করোনা মহামারিতে অনেকের বদলি হয়েছে, অনেকের চাকরি চলে গেছে। তাই উপায় না পেয়ে তারা অন্যত্র চলে গেছেন। শেওলা ইউনিয়নে অবস্থিত একটি কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরে স্কুল খুললেও আমরা শিক্ষার্থী পাব না। তবে নভেম্বর থেকেই আমরা ভর্তি কার্যক্রম শুরু করি। তাই আগামী বছরের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারব। শিক্ষকদের অনেকেই আর এই পেশায় আসবেন না। আর অনেক স্কুলই ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

কিন্ডারগার্টেনের আরেক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুধু শিক্ষার্থী নয়, অনেক শিক্ষকও আর ফিরবেন না স্কুলে। আমার দুজন শিক্ষক বরিশাল ও জকিগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। তাদের আর শিক্ষকতায় ফেরার ইচ্ছা নেই। আমরা কোনোমতে ধার-দেনা করে স্কুলটি টিকিয়ে রেখেছি। শিক্ষকতা পেশা ছাড়া অন্য কোনো কাজ তো করিনি। তাই এই পেশা ছাড়তে পারছি না।

ওই স্কুলের শিক্ষক মামুনুর রশীদ বলেন, পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। তাই কোনোমতে থাকতে পারছি। যদি স্কুল খোলে, তাহলে আবার শিক্ষকতায় ফিরে আসব।

জানা যায়, ছোটখাটো কিন্ডারগার্টেনে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই বেশি ভর্তি হয়। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) ছাড়াই ভর্তির সার্কুলার জারি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। যাতে যেসব কিন্ডারগার্টেন এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বা যারা গ্রামে চলে গেছেন, তারা তাদের সন্তানদের কাছাকাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিসি ছাড়া ভর্তি করাতে পারেন। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দিলেও এ বছর কতজন অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে সে তথ্য এখনও তাদের হাতে নেই।

কিন্ডারগার্টেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষ নাগাদ স্কুল খুললেও তাদের শিক্ষার্থীদের খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। কারণ বছরের শেষ সময়ে কেউ স্কুলে আসবে না। অনেক অভিভাবকই মনে করবেন, স্কুলে আসতে হলে হয়তো ভর্তি ফিসহ পুরো বছরেরই বেতন দিতে হবে। এ কথা চিন্তা করে তারা তাদের সন্তানদের কিন্ডারগার্টেনে পাঠাবেন না। এছাড়া নিম্নবিত্ত পরিবারের অনেক শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন অভিভাবকরা।


এসএ/আরআর-০১