প্রচার শেষে ভোটের অপেক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক


সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২১
০৩:৪৮ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২১
০৩:৪৮ অপরাহ্ন



প্রচার শেষে ভোটের অপেক্ষা
# শনিবার ১৪৯ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ # থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা

দুই দফা পেছানোর পর অবশেষে সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আসনটি শূন্য ঘোষণার ১৭২ দিন পর আগামীকাল শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) এ আসনে ভোটগ্রহণ হবে। এরই মধ্যে প্রার্থীদের প্রচার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। 

নির্বাচনে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব (নৌকা), জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক (লাঙল), স্বতন্ত্র প্রার্থী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী (মোটর সাইকেল) ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া (ডাব) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এদিকে, সুষ্ঠু ও নিরাপদ ভোটগ্রহণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কয়েক স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনীতে ১৪৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে তিন উপজেলায় তিনজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রতি ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলায় পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) লুৎফুর রহমান জানান, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে জেলা পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ৩৬টি এবং বালাগঞ্জ উপজেলায় ৩৪টি কেন্দ্র রয়েছে।

প্রতিটি কেন্দ্রে একজন উপপরিদর্শক, একজন অতিরিক্ত উপপরিদর্শক ও চারজন কনস্টেবল নিয়োজিত থাকবেন। তবে কেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় কনস্টেবল সংখ্যা বেশি হতে পারে। এছাড়া প্রতি দুই বা তিনটি কেন্দ্রের জন্য একটি মোবাইল টিম থাকবে। পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও র‌্যাব-বিজিবির সদস্যরা দায়িত্বে থাকবেন।

সিলেট মহানগর পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তার থানার অধীনে ৩৫টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি মোট ১৪ থেকে ১৬টি মোবাইল টিম, ২৫ সদস্য করে দুটি স্ট্রাইকিং ফোর্স, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা দায়িত্বে থাকবেন।

সুষ্ঠু ও ভয়ভীতিহীন ভোটগ্রহণে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের নিয়মিত মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামসুদ্দোহা পিপিএম জানান, তার থানার অধীনে ৪৪টি কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কেন্দ্রে দুষ্কৃতকারীরা বিশৃঙ্খলা করতে পারে বলে তথ্য রয়েছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ দৃষ্টি রাখবে বলে জানান তিনি।

৪৪টি কেন্দ্রের জন্য ১৬টি মোবাইল টিম, দুটি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও প্রতি ইউনিয়নের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।

এদিকে, বুধবার নির্বাচন কমিশনের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সিলেট-৩ আসনের নির্বাচনের জন্য তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরা হলেন, সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁঞা; তিনি দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় দায়িত্ব পালন করবেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জন কান্তি দাস দায়িত্ব পালন করবেন বালাগঞ্জ উপজেলায় এবং সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন ভূঁইয়াকে ফেঞ্জুগঞ্জ উপজেলায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তারা গতকাল ২ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট পাঁচদিন নির্বাচনী মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। বিচার কাজের জন্য তারা একজন বেঞ্চ সহকারী/স্টেনোগ্রাফার/অফিস সহকারীকে সহকারী হিসেবে সঙ্গে নিতে পারবেন।

সিলেটের জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম জানান, প্রতিটি উপজেলায় একজন করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে নির্বাচন মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা নির্বাচনের দিন দায়িত্ব পালন করবেন।

এরই মধ্যে নির্বাচনী সরঞ্জাম সিলেটে পৌঁছেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা সভা করেছি। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে সংশ্লিষ্ট সবাই কাজ করবেন।’ আজ শুক্রবার নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসন। ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার। গত ১১ মার্চ করোনা আক্রান্ত হয়ে এ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যু হয়। এরপর ১৫ মার্চ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

করোনা পরিস্থিতির কারণে দেরিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ২ মার্চ ঘোষিত তফসিল ঘোষণার সময় ১৪ জুলাই নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুপারিশে ২৮ জুলাই নতুন তারিখ দেওয়া হয়। কিন্তু, নির্বাচনের দুদিন আগে একটি রিটের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত নির্বাচন স্থগিতের নির্দেশ দেন। অবশেষে আগামীকাল ৪ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে।

ভোটগ্রহণের আগে প্রচার কার্যক্রমও আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। প্রার্থীদের কেন্দ্রীয়-স্থানীয় নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে নির্বাচনী সভা-সমাবেশে গত কয়েকদিন দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জে ব্যাপক আমেজ লক্ষ্য করা যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ছিল প্রচারের শেষ দিন। এখন কেবল ভোটের অপেক্ষা।

এসএইচ/বিএ-০১