আগস্টে সিলেটে শনাক্ত কমলেও মৃত্যুতে রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক


সেপ্টেম্বর ০২, ২০২১
০৫:৪০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ০২, ২০২১
০৩:১৯ অপরাহ্ন



আগস্টে সিলেটে শনাক্ত কমলেও মৃত্যুতে রেকর্ড
# একমাসে শনাক্ত ১২ হাজার ৫৩১ জন, মৃত্যু ৩৭৩ জনের # মৃতদের ৮৬ শতাংশই সিলেট জেলার

আগস্টে সিলেটে শনাক্তের সংখ্যা এবং হার কমেছে। কিন্তু করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুতে রেকর্ড হয়েছে। এই মাসে সিলেট বিভাগে ৩৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে; যা সংক্রমণ শুরুর পর এখন পর্যন্ত একমাসে সর্বোচ্চ। সিলেট বিভাগের মৃতদের মধ্যে ৮৬ শতাংশই সিলেট জেলার বাসিন্দা। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আগস্টে একমাসে বিভাগে ১২ হাজার ৫৩১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলার ৭ হাজার ৩৩৭ জন, সুনামগঞ্জে এক হাজার ৩৭৯ জন, হবিগঞ্জে এক হাজার ৬১১ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ২০৪ জন। অর্থাৎ আগস্টে মোট শনাক্তের ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশই সিলেট জেলার বাসিন্দা। বাকিদের মধ্যে ১১ শতাংশ সুনামগঞ্জের, হবিগঞ্জের ১২ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং মৌলভীবাজারের ১৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

আগস্টে শনাক্তদের মধ্যে প্রথম ১০ দিনে ১৮ হাজার ৮১৮টি নমুনায় ৬ হাজার ৫৫৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। পরের দশদিনে ১৫ হাজার ৭৩৭টি নমুনা পরীক্ষায় চার হাজার ৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ছিল ২৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর শেষ ১১ দিনে বিভাগের ১২ হাজার ৭০৩টি নমুনা পরীক্ষায় ১ হাজার ৯৪২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। 

এদিকে, গত মাসে বিভাগে ৩৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা সংক্রমণ শুরু পর একমাসে সর্বোচ্চ। এর আগে চলতি বছরের জুলাইয়ে একমাসে সর্বোচ্চ ২২৪ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আগস্টে মৃতদের মধ্যে প্রথম ১০ দিনে মারা যান ১৪২ জন, পরের ১০ দিনে ১২৮ জন। আর শেষ দশদিনে কমে আসে ১০৩ জনে।

এদের মধ্যে সিলেট জেলায় মারা যান ৩২৪ জন, সুনামগঞ্জে ২১ জন, হবিগঞ্জে ১৬ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় ১২ জন। বিভাগে মৃতদের মধ্যে ৮৬ দশমিক ৮৬ শতাংই সিলেট জেলার বাসিন্দা। এছাড়া সুনামগঞ্জে ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ, হবিগঞ্জে ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং মৌলভীবাজার জেলায় মারা যান ৩ দশমিক ২১ শতাংশ। 

এদিকে, আগস্টে ১২ হাজার ৯৫৫ জন করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়েছেন। সুস্থদের মধ্যে সিলেট জেলায় রয়েছেন ৮ হাজার ২০০ জন, সুনামগঞ্জে এক হাজার ৫৬৪ জন, হবিগঞ্জে ৮৬৯ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় দুই হাজার ৩২২ জন। 

গত বছরের ৫ এপ্রিল সিলেটে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন। প্রথম মৃত্যু হয় ১৫ এপ্রিল। ওই বছরের এপ্রিলে করোনা শনাক্ত হয় ১১০ জনের, মৃত্যু হয় ৩ জনের। মে মাসে শনাক্ত হয় ৯৩০ জনের, মৃত্যু হয় ১৬ জনের। জুনে শনাক্ত হয় ৩ হাজার ৫৭৪ জনের, মৃত্যু হয় ৫৮ জনের।

জুলাই মাসে শনাক্ত হয় ৩ হাজার ৩০০ জনের, মৃত্যু হয় ৬৯ জনের। আগস্ট মাসে শনাক্ত হয় ২ হাজার ৯৭৪ জনের, মৃত্যু হয় ৪১ জনের। সেপ্টেম্বরে শনাক্ত হয় ১ হাজার ৭৮২ জনের, মৃত্যু হয় ৩১ জনের। অক্টোবরে শনাক্ত হয় ১ হাজার ৯ জনের, মৃত্যু হয় ১৩ জনের।

নভেম্বরে শনাক্ত হয় ৯৬৭ জনের, মৃত্যু হয় ১৩ জনের। ডিসেম্বরে শনাক্ত হয় ৮৪৭ জনের, মৃত্যু হয় ১৯ জনের। এ বছরের জানুয়ারিতে শনাক্ত হয় ৫০৯ জনের, মৃত্যু হয় ১২ জনের। ফেব্রæয়ারিতে শনাক্ত হয় ৩০৩ জনের, মৃত্যু হয় ৩ জনের।

মার্চে শনাক্ত হয় ১ হাজার ১৮৬ জনের। আর মৃত্যু হয় ১২ জনের। এপ্রিলে করোনা শনাক্ত হয় ৩ হাজার ২০১ জন। আর মৃত্যু হয় ৬০ জনের। মে মাসে বিভাগে করোনা শনাক্ত হয় দুই হাজার ৪ জনের। আর মৃত্যু হয় ৫৯ জনের। জুনে ৩ হাজার ২৮৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। মৃত্যু হয় ৬৯ জনের এবং জুলাইয়ে শনাক্ত হয় সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৪৭১ জনের। এ মাসে মারা যান ২২৪ জন। 

গত বছরের এপ্রিলে প্রথম রোগী শনাক্তের পর মে-জুনে শনাক্ত ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। তবে আগস্টের পর সংক্রমণ ছিল নিম্নমুখী। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মার্চের শেষ দিকে আবারও বাড়তে থাকে। এপ্রিলের পর সরকারি বিধি-নিষেধে সংক্রমণের হার কিছুটা কমলেও গত ঈদুল ফিতরের পর আবারও সংক্রমণ বাড়তে শুরু হয়। জুলাইয়ে তা বাড়ে আশঙ্কাজনক হারে।

জুলাইয়ে সংক্রমণের হার চূড়ায় থাকায় সিলেটের সব আইসিইউ ও সাধারণ শয্যা রোগীতে পূর্ণ হয়ে যায়। বিশেষ করে সিলেট মহানগরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা পাওয়া দুরূহ হয়ে উঠে। রোগীর চাপে হাসপাতালগুলো শয্যা ও আইসিইউ বাড়িয়েও রোগীর জায়গা দিতে পারছিল না। তবে মধ্য আগস্ট থেকে সিলেটে কমতে শুরু করেছে করোনার সংক্রমণ। সংক্রমণ কমায় হাসপাতালগুলোতেও রোগীর চাপ কমেছে। 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারাদেশের মতো সিলেটেও সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। তাই বলে স্বাস্থ্যবিধিতে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষা করলে সংকমণ আবারও বেড়ে যেতে পারে।

শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) চয়ন রায় সিলেট মিররকে বলেন, ‘আগস্টের মাঝামাঝি থেকে হাসপাতালে রোগীর চাপ কমেছে। বর্তমানে হাসপাতালে ৭০ জন রোগী ভর্তি আছেন। এদের মধ্যে ৪৮ জন করোনা পজিটিভ। অন্যরা করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন।’ তবে হাসপাতালে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি নেই বলে তিনি জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘সংক্রমণ কমলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। ১৮ বছরের অধিক সবাইকে টিকা নিতে হবে। শতভাগ মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’

এনএইচ/আরসি-০৩