নিজস্ব প্রতিবেদক
সেপ্টেম্বর ০১, ২০২১
০৭:৩০ অপরাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ০১, ২০২১
০৭:৩৬ অপরাহ্ন
মদন মোহন কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর ভর্তির ফি কলেজ ছাত্রলীগের নেতারা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, কম ফিতে ভর্তির প্রলোভন দেখিয়ে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি একেএম মাহমুদুল হাসান সানি ও সাধারণ সম্পাদক মিফতাহুল হোসেন লিমন দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে নেন। সম্প্রতি এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন তারা ভর্তি হননি।
কলেজ প্রশাসন জানিয়েছে, তারা এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাননি। তবে যারা এখনও ভর্তি হননি তাদের আগামী ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বকেয়া ভর্তি ফি ও ফরম পূরণের টাকা অনলাইনের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কলেজ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মিফতাহুল হোসেন লিমন।
জানা গেছে, মদন মোহন কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রায় ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় বর্ষের ভর্তির জন্য নির্ধারিত ফি ছিল ৮ হাজার ৫০০ টাকা। তবে করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ৩ হাজার ৫০০ টাকা ছাড় দিয়ে কলেজ প্রশাসন ভর্তি ফি ৫ হাজার টাকা পুনর্নির্ধারণ করে। গত বছরের অক্টোবর থেকে অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি ফি জমা দিতে কলেজ থেকে শিক্ষার্থীদের বার বার বার্তা (ম্যাসেজ) পাঠানো হলেও দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হননি।
এদিকে, চলতি মাসে শুরু হয়েছে এইচএসসি ২০২১ পরীক্ষার ফরম পূরণ। তখন ভর্তি না হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছে ভর্তি হয়ে ফরম পূরণের জন্য শিক্ষাবোর্ড থেকে পুনরায় বার্তা (ম্যাসেজ) যায়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, তারা গত বছর ৫ হাজার টাকা ভর্তি ফি’র জায়গায় ২ হাজার ৫০০ টাকা কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি সানি ও সাধারণ সম্পাদক লিমনের কাছে জমা দেন। তবে চলতি মাসে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে গিয়ে তারা দেখতে পারেন তাদের ভর্তির টাকা জমা হয়নি। এ বিষয়ে তারা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগযোগ করলে নেতৃবৃন্দ তাদের এ বিষয়ে চিন্তা না করতে বলেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, চলতি মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত ফরম পূরণের শেষ দিন ছিল। তবে সম্প্রতি তা বাড়িয়ে সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখ পর্যন্ত করা হয়েছে। করোনার এই সময়ে তারা নতুন করে ৫ হাজার টাকা কোথায় পাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের এক শিক্ষার্থী সিলেট মিররকে বলেন, ‘গত বছর আমার কাছে কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য টেলিটকের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা জমা দেওয়ার জন্য ম্যাসেজ আসে। এ সময় আমিসহ আমার আরও কিছু বন্ধু কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সানি ভাইয়ের কাছে ভর্তির জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা দেই। তিনি আমাদের ভর্তি করিয়ে দিবেন বলে আশ্বাস দেন। তবে চলতি মাসে এইচএসসির ফরম পূরণ করতে গিয়ে জানতে পারি আমাদের ভর্তির টাকাই জমা হয়নি। এখন আমাদের নতুন করে আবার ৫ হাজার টাকা ভর্তি ফি ও ফরম পূরণের টাকা জমা দিতে হবে। এ অবস্থায় আমরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছি। পরিবারের সদস্যদেরও বিষয়টি জানাতে পারছি না।’
এ বিষয়ে কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে যোগযোগ হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজ তো বন্ধ। তাই কলেজের কারও সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়নি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি এ. কে. এম. মাহমুদুল হাসান সানির নাম্বারে ফোন করে ব্যস্ত পাওয়া যায়। আর সাধারণ সম্পাদক মিফতাহুল হোসেন লিমন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সর্ব্বানী অর্জুন বিষয়টি শুনেছেন বলে সিলেট মিররকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের হিসাবে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভর্তি ফি জমা দিতে পারেনি। ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের কাছে ভর্তির টাকা জমা দিয়ে ভর্তি হতে পারেননি বলে আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টি আমিও শুনেছি।’
তিনি বলেন, ‘এবার বোর্ড থেকে আমাদের বলা হয় শিক্ষার্থীদের তথ্য বোর্ডে পাঠাতে হবে। চলতি মাসের ২৫ তারিখ ছিল এই তথ্য পাঠানোর শেষ তারিখ। আমরা এ দিন শিক্ষার্থীদের তথ্য বোর্ডে পাঠাই। এ সময় শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের শেষ সময় ছিল ৩০ আগস্ট পর্যন্ত। তবে পরে সময় বাড়িয়ে কলেজের তথ্য পাঠানোর শেষ সময় করা হয় ৩১ আগস্ট। আর শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের শেষদিন নির্ধারিত করা হয় আগামী ৪ সেপ্টেম্বর।’ যেসব শিক্ষার্থী এখনও ভর্তি হতে পারেনি তাদের আগামী ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভর্তি ফি ও ফরম পূরণের টাকা জমা দিতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না জানতে জানতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ‘অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি দেখব। যেহেতু জেলা প্রশাসক আমাদের কলেজের আর্থিক বিষয়টি দেখেন, প্রয়োজনে উনাকেও বিষয়টি অবগত করা হবে।’
এনএইচ/আরসি-১৫