ফারহান মাসউদ আফছর, গোলাপগঞ্জ
সেপ্টেম্বর ০১, ২০২১
০৩:০২ পূর্বাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ০১, ২০২১
০৩:০৩ পূর্বাহ্ন
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত হাকালুকি হাওরের কালিকৃষ্ণপুর থেকে বাঘা হাওরের আগলসপুর পর্যন্ত এলাকা এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। উপজেলার ৩০৮টি গ্রামে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। গত ১২ বছরে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৭৪ হাজার ১৮৪ জন। গত এক যুগে গোলাপগঞ্জের বিদ্যুৎ খাতে সঞ্চালন লাইন স্থাপন ও গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি গত ৩৮ বছরের মোট অর্জনের তুলনায়ও বেশি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিতে এই সময়ের মধ্যে ৩টি নতুন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপন ও ৭৩৬ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান গোলাপগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম গোপাল চন্দ্র শিব।
গোলাপগঞ্জ জোনাল অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ২১২ জন, যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ১৮৪ জনে। এই সময়ে উপজেলার ৩০৮টি গ্রামের মধ্যে সব গ্রামেই বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান নিশ্চিত হয়েছে। ২০০৯ সালের পূর্বে উপজেলায় একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ছিল। ২০০৯ সালের পর নতুন আরও ৩টি উপকেন্দ্র নির্মাণ করায় বর্তমানে উপজেলায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের সংখ্যা ৪টি। ২০০৯ সালের পূর্বে উপজেলার একমাত্র উপকেন্দ্রের ক্ষমতা ছিল ১৫ এমভিএ। এখন ৪টি উপকেন্দ্রের ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ এমভিএ। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনেও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। উপজেলায় মোট সঞ্চালন লাইন ছিল ৭০৫ কিলোমিটার। ২০০৯ সালের পর যা ৭৩৬ কিলোমিটার বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১ হাজার ৪৪১ কিলোমিটার। একই সঙ্গে উপজেলার চাহিদা অনুযায়ী লোড ৮ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ মেগাওয়াট।
পল্লী বিদ্যুতের গোলাপগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম গোপাল চন্দ্র শিব বলেন, শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা গোলাপগঞ্জ। উপজেলার ৩০৮টি গ্রামেই বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। গোলাপগঞ্জে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা প্রদানে তাদের ১০৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ভূমি জটিলতা ও পারিবারিক বিরোধের কারণে কিছু কিছু সংযোগ দেওয়া যায়নি। তারা সমস্যার সমাধান করলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংযোগ দেওয়া হবে।
এদিকে, বিদ্যুৎ সেবার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। উপজেলার শরিফগঞ্জ ইউনিয়নের কালিকৃষ্ণপুর গ্রামের আলাউদ্দিন বলেন, আমার এলাকায় বিদ্যুৎ আসবে এবং আমি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে উপকৃত হব- এ কথা বিশ্বাস হতো না। যেদিন বিদ্যুৎ এসেছে সেদিন আমার খুব ভালো লেগেছিল। সেদিন ইচ্ছা করে কয়েকবার সুইচ অন-অফ করি, বাতি জ্বালাই আর বন্ধ করি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ খুবই প্রয়োজন। পূর্বে লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ব্যাপারে বিরক্তি এসে গিয়েছিল। কিন্তু এখন লোডশেডিং কী তা প্রায় ভুলেই গেছি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী রিংকু বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার সর্বোচ্চ আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ প্রতিটি সেক্টরেই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। বিগত কয়েকবছরে এসব ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, যার সুফল জনগণ পাচ্ছে।
উন্নয়নে সরকার বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ বলেন, দৈনন্দিন জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে বিদ্যুৎ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারাবাহিক নেতৃত্বে সরকার বিদ্যুৎ খাতে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে। ২০০৯ সালে যে জায়গায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, সেখানে বর্তমানে উৎপাদন ক্ষমতা হয়েছে ২৪ হাজার ৯৮২ মেগাওয়াট। সরকারপ্রধানের দূরদর্শী নেতৃত্বে বিদ্যুৎ খাতে এ যুগান্তকারী সাফল্য এসেছে। সেই ধারা এখনও চলমান।
বিদ্যুৎ উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত উল্লেখ করে গোলাপগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম কবির বলেন, বাংলাদেশ আজ বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। 'শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ' এ কর্মসূচির আওতায় গোলাপগঞ্জ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎতায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করায় বাংলাদেশে আজ বিদ্যুৎ সংকট নেই। বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে মানুষ আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন তথা জীবনমানের উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হচ্ছে।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী, সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে গত এক দশকে বিদ্যুৎ খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে সকলের জন্য নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার প্রদান করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করায় গোলাপগঞ্জ উপজেলার মতো সারা দেশের প্রতিটি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করা যাচ্ছে।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ খাতে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গোলাপগঞ্জ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়েছে ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে জয় করে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বসভায় মর্যাদাবান জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
এফএম/আরআর-১১