নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ২৮, ২০২১
০৪:২২ পূর্বাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ২৮, ২০২১
০৪:২২ পূর্বাহ্ন
সিলেটে করোনার সংক্রমণ কমছে। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সংক্রমণ নিম্নমুখী। সংক্রমণ কমায় হাসপাতালগুলোতেও রোগীর চাপ কমতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সকাল আটটা পর্যন্ত বিভাগের ৬৬ শতাংশ শয্যা খালি ছিল। কিন্তু, কমেনি আইসিইউর চাহিদা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় জানায়, বিভাগের চার জেলায় এক হাজার ১২৫ টি শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত বিভাগে ৩৭৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। অর্থাৎ, মোট শয্যার ৬৬ দশমিক ৩ শতাংশ শয্যা খালি রয়েছে।
বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে সিলেট জেলায় ভর্তি আছেন ৩০৩ জন। বাকিদের মধ্যে সুনামগঞ্জে ভর্তি আছেন ৩৪ জন, হবিগঞ্জে ২১ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় ২০ জন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ কমায় হাসপাতালে রোগী ভর্তির চাপ কমতে শুরু করেছে। তবে, স্বাস্থ্যবিধিতে কোনো ছাড় দেওয়া উচিত হবে না।
গত বছরের ৫ এপ্রিল সিলেটে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়। ঐ বছরের মে থেকে জুনে শনাক্ত ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। তবে, আগস্টের পর থেকে তা ছিল নিম্নমুখী। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মার্চের শেষ দিকে আবারও বাড়তে থাকে। এপ্রিলের পর সরকারি বিধি-নিষেধে সংক্রমণের হার কিছুটা কমলেও গত ঈদুল ফিতরের পর আবারও সংক্রমণ বাড়তে শুরু হয়। জুলাইয়ে তা বাড়ে আশঙ্কাজনক হারে।
এদিকে, জুলাইয়ে সংক্রমণের হার চ‚ড়ায় থাকায় সিলেটের সব আইসিইউ ও সাধারণ শয্যা রোগীতে পূর্ণ হয়ে যায়। বিশেষ করে সিলেট মহানগরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা পাওয়া দুরূহ হয়ে উঠে। জেলার উপজেলা ও বিভাগের বাকি ৩ জেলা থেকে রোগীরা সিলেটের হাসপাতালগুলোতে ভিড় জমান। রোগীর চাপে হাসপাতালগুলো শয্যা ও আইসিইউ বাড়িয়েও রোগী জায়গা দিতে পারছিল না। তবে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সিলেট কমতে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। সংক্রমণ কমায় হাসপাতালগুলোতে কমতে শুরু করেছে রোগী ভর্তি সংখ্যা।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই মাসের ২৫ দিনে বিভাগে ১১ হাজার ৫৮৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মাসের প্রথম ৫ দিনে শনাক্ত হয় ৩ হাজার ৭৬৭ জন, দ্বিতীয় ৫ দিনে শনাক্ত হয় ২ হাজার ৭৯২ জন, তৃতীয় ৫ দিনে শনাক্ত হয় ২ হাজার ২৬০ জন, চতুর্থ ৫ দিনে শনাক্ত হয় ১ হাজার ৭৭০ জন এবং শেষ ৫ দিনে শনাক্ত হয় ৯৯৫ জনের।
গত জুলাইয়ের প্রথম থেকেই সিলেট করোনা আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল রোগীতে পরিপূর্ণ। রোগীর চাপের কারণে এক কেবিনে দুইজন রোগীকে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। তবে, গতকাল বৃহস্পতিবার ১০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬৫ জন।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. মিজানুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা কমে আসছে। কারণ এখন শনাক্ত কমেছে।’
তবে, আইসিইউর চাহিদা কমছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা এখনও খালি নেই। একটি আইসিইউ শয্যার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে তদবিরও আসে। তবে খালি না হলে তো দেওয়া যায় না। শনাক্ত কমলেও যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন।’
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘হাসপাতালে সাধারণ শয্যা খালি আছে। তবে, আটটি আইসিইউ শয্যার একটিও খালি নেই। কারণ, শনাক্ত কমলেও সঙ্কটাপূর্ণ রোগীর সংখ্যা কমছে না।’
সিলেট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আইসিইউ শয্যা রয়েছে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে ৩৩টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে খালি আছে মাত্র ৩টি। হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ইনচার্জ ডা. নাজমুল হক সিলেট মিররকে বলেন, ‘রোগীরা হাসপাতালে আসতে অনেক দেরি করেন। যারাই ভর্তি হচ্ছেন তাদের অনেকের আইসিইউ প্রয়োজন হচ্ছে। এতে আইসিইউতে চাপ রয়েছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়েল পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘সংক্রমণ কমে আসায় হাসপাতালেও চাপ কমছে। বর্তমানে বিভাগের প্রায় ৬৫ শতাংশ শয্যাই খালি আছে। তবে, সংক্রমণ কমলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। টিকা নেওয়ার সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। মাস্ক ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।’
এনএইচ/আরসি-০১