সিলেট অঞ্চলে মাটির গভীরে আরও গ্যাস!

সিলেট মিরর ডেস্ক


আগস্ট ২৫, ২০২১
০৩:৩২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ২৫, ২০২১
০৩:৩২ পূর্বাহ্ন



সিলেট অঞ্চলে মাটির গভীরে আরও গ্যাস!

সিলেটসহ দেশের বিদ্যমান গ্যাসক্ষেত্রগুলোর আরও গভীরে খনন করলে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, পাথারিয়া, আটগ্রাম, বিয়ানীবাজার, বিবিয়ানা ও সুনেত্র-এর মতো গ্যাসের অবকাঠামে আছে এমন জায়গাগুলোতে দ্রুত অনুসন্ধান শুরু করা দরকার।  

দেশে এখন গ্যাসের খনিগুলো মাটির চার থেকে সাড়ে চার হাজার মিটার নিচে। এর নিচে কী আছে তা জানা যায়নি। তবে বাপেক্সের ত্রিমাত্রিক জরিপে দেখা যাচ্ছে ভূপৃষ্ঠের পাঁচ কিলোমিটার গভীরে আরও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমেদ ফারুক চিশতী জানান, ‘মাটির আরও গভীরে খনন করলে গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। দেশের খনিগুলোর মধ্যে তিতাসের সেই সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তিতাসে বাপেক্স পরিচালিত ত্রিমাত্রিক জরিপে দেখা গেছে সেখানে পাঁচ হাজার মিটারের নিচে খনন করলে অন্তত ১.৬ টিসিএফ গ্যাস পাওয়া যেতে পারে।’

এ ছাড়াও সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনায় অবস্থিত ‘সুনেত্র’ এলাকায় এ ধরনের খননকাজ চালালে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানান, আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মধ্যে তিতাসের মতো বড় গ্যাসক্ষেত্র ছাড়াও ফেঞ্চুগঞ্জ, পাথারিয়া, আটগ্রাম, সীতাকুণ্ড, সুনেত্র, মোবারকপুর, শ্রীকাইল, পটিয়া, কাসালং-এর মতো গ্যাসের অবকাঠামো আছে। এমন জায়গাগুলোতেও অনুসন্ধান শুরু করা দরকার। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেশে ড্রিলিং করার মতো উন্নত যন্ত্রাংশ (রিগ) নেই। বিদেশি কোনও প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দিতে হবে। এ ধরনের একটি কূপ খননে ৩০০ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, চীন, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমারের মতো দেশ পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১২ হাজার মিটারের বেশি খনন করেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে গভীরে খনন হয়েছে রাশিয়াতে- ১২ হাজার ২৬২ মিটার। ১৫ হাজার মিটার পর্যন্ত খননের ইচ্ছে থাকলেও অতিরিক্ত তাপের কারণে তা করতে পারছে না তারা। এদিকে ৯ হাজার ৫৮৩ মিটার নিচ থেকে গ্যাস এবং ১০ হাজার ৬৮৭ মিটার নিচ থেকে তেল উত্তোলন করছে যুক্তরাষ্ট্র। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, ‘আমাদের দেশে গ্যাসের পরিমাণ যে হারে কমছে তাতে আগামী কয়েক বছরে হুট করে অনেক ক্ষেত্র ফুরিয়ে যেতে পারে। এখন ঘাটতি পূরণে এলএনজি আমদানি করা হলেও আচমকা ৩০-৪০ কোটি ঘনফুট ঘাটতি দেখা দিলে সামাল দেওয়া কঠিন হবে। তাই আমাদের দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে আরও মনোযোগী হওয়া দরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার নয়, পুরনো অনেক ক্ষেত্রের নিচেও গ্যাস থাকার প্রমাণ পেয়েছি। প্রযুক্তির অভাবে সেখানে খনন শুরু করতে পারিনি। সেখানে খননের জন্য এখনই উদ্যোগ নেওয়া দরকার। পাশাপাশি  কোন ক্ষেত্রের নিচে আরও কী পরিমাণ গ্যাস মজুত আছে সে উপাত্তও সংগ্রহ করা জরুরি। নিজেরা একা না পারলে বিদেশি অভিজ্ঞতা আছে এমন কোম্পানির সঙ্গে কাজ শুরু করতে পারে বাপেক্স।’

এদিকে সম্প্রতি এক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর গভীর স্তরে অনুসন্ধানের পরামর্শ দিয়েছেন। গত ১৪ আগস্ট এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিন আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা এই পরামর্শ দেন। 

ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মর্তুজা আহমেদ ফারুক। 

তিনি বলেন, তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের যে স্তর থেকে এখন যে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে, তার নিচের স্তরগুলোতে গ্যাস থাকার সম্ভাবনা প্রবল। গভীর স্তরে খনন করে এই গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। তিতাসের নিচে সাড়ে সাত হাজার মিটার পর্যন্ত গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তিতাস ছাড়াও আরও কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফি বলেন, সরকারি কোম্পানি বাপেক্সের একার পক্ষে এসব কাজ করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে অন্য বিদেশি অভিজ্ঞ কোম্পানি অথবা প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগিয়ে কাজ করানো সম্ভব। দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে বাপেক্সকে ফুল অথোরিটি দেওয়া, বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে কাজ করতে দেওয়া ও প্রবাসী অভিজ্ঞদের কাজ লাগানো উচিত। সবার আগে আমাদের মাইন্ড সেটআপ চেঞ্জ করতে হবে। সংকট কাটাতে হলে রিয়েল এক্সপার্টদের কাজে লাগাতে হবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ভ‚ঁইয়া বলেন, দেশের বেশ কিছু গ্যাসব্লকে ডিপ ড্রিলিং করে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পার্বত্য এলাকাসমূহে এ সম্ভাবনা আছে। তিতাস, বাখরাবাদ, শ্রীকাইল, শাহবাজপুর, রশিদপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় এই খনন এখন সময়ের দাবি। 

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, দেশের অনেক আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রে আমরা হাই প্রেসার জোন পেয়েছি। প্রেসারের কারণে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন এইসব হাই প্রেসার জোনে কী পরিমাণ গ্যাস আছে তা কিন্তু প্রমাণিত নয়। তাই আমাদের ড্রিপ ড্রিলিংয়ে যাবার আগে সেখানে কী পরিমাণ গ্যাস আছে সে তথ্যগুলো কালেক্ট করে একটি ডাটা বেইজ করে মডেলিং করা যেতে পারে। আমরা এখনো আশাবাদী, অনেক এলাকায় গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। একদিন এই গ্যাস আবিষ্কার হবে এবং আমাদের গ্যাস সংকট কেটে যাবে বলে আমরা আশা করছি। 

বিএ-১৩