‘অনন্ত আছে মুক্তচিন্তার অনুপ্রেরণা হয়ে’

নিজস্ব প্রতিবেদক


মে ১৩, ২০২০
০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ১৩, ২০২০
০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন



‘অনন্ত আছে মুক্তচিন্তার অনুপ্রেরণা হয়ে’
মুক্তমনা লেখককে অনলাইনে স্মরণ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এবার বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অনন্ত বিজয় দাশকে অনলাইনেই স্মরণ করলেন তাঁর সহযোদ্ধারা। অনন্ত বিজয় দাশের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে আজ মঙ্গলবার গণজাগরণ মঞ্চ সিলেটের সংগঠকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও প্রকাশ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পাশাপাশি অনন্ত হত্যার দ্রুত বিচার এবং খুনিদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানিয়েছেন।    

অনন্ত বিজয়ের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল বলেন, ‘অনন্ত বিজয় ছিলেন একজন সত্যিকারের মুক্তচিন্তক। তিনি মুক্তচিন্তার আন্দোলনের একজন জ্ঞানতাত্ত্বিক যোদ্ধা। অনন্ত বিজয়ের সাথে আমার পরিচয় ঘটে তার সম্পাদিত এবং প্রকাশিত ‘যুক্তি’ পত্রিকার মাধ্যমে। যুক্তি ছিল একটি অসাধারণ পত্রিকা। সে যুক্তিকে কেন্দ্র করে যেভাবে লেখকদেরকে সংগঠিত করেছিল সেটিও ছিল খুবই কার্যকরী একটি কার্যক্রম। নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করি- আমি তাঁর প্রথম বইয়ের প্রকাশক ছিলাম এবং তাঁর আরও একটি বই প্রকাশ করেছিলাম। আমি এই মুহূর্তে আসলেই অনন্তকে মিস করছি এবং আমি চাই যে, যারাই মুক্তচিন্তার কথা বলবেন, যারাই মুক্ত মন আন্দোলনের কথা বলবেন তারা অনন্তের পদ্ধতিকে অবলম্বন করবেন এবং অনুসরণ করবেন।’  

শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরী বলেন, ‘জ্ঞানের জ্যোতি ছড়াবে অনন্ত অনন্তকাল- এই স্লোগানে আমরা প্রতিবছর অনন্তকে স্মরণ করি। প্রয়াত অ্যাডভোকেট মঈনুদ্দিন আহমদ জালাল তাঁর স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে গেছেন। মানুষ চিরকাল থাকে না। রয়ে যায় তাঁর কর্ম। অ্যাডভোকেট জালালকে আমরা গতবছর থেকে এইসব অনুষ্ঠানে পাই না।’ 

নাজিয়া চৌধুরী অনন্ত বিজয়ের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘অভিজিৎ-অনন্তকে কখনও হত্যা করা যায় না। তারা রয়ে গেছে সকল বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের মাঝে। আছে মুক্তচিন্তার অনুপ্রেরণা হয়ে।’ 

গণজাগরণ মঞ্চ সিলেটের সংগঠক রাজীব রাসেল বলেন, ‘অনন্ত বিজয় দাশ বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন-এটা তাঁর অপরাধ! তিনি চাইছিলেন মানুষ সত্যটা জানুক। সেটা অপরাধ! কাজেই সে অপরাধে তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে।’ 

অনন্ত হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বন্ধু, স্বজন সহকর্মী, সহযোদ্ধা অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। এই পাঁচটি বছরে আমরা খুব হতাশ হয়ে দেখেছি- মামলায় তেমন অগ্রগতি হয়নি। খুনিদের বিচার হয়নি। অনন্তদাকে যারা হত্যা করেছে আমাদের কাছে তারা অপরাধী। আমরা তাদের বিচার চাই।’

গণজাগারণ মঞ্চ সিলেটের সংগঠক দেবাশীষ দেবু খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আশ্চর্যের ব্যাপার হলো- পাঁচবছর পেরিয়ে গেছে, এখন পর্যন্ত অনন্ত হত্যা মামলার কোনো কিনারা হয়নি। আমরা অনন্ত বিজয়কে আর পাব না। খুনিদের যদি চিহ্নিত করা যায়, তাদেরকে যদি বিচারের মুখোমুখি করা যায় তাহলে অন্তত বলা যাবে রাষ্ট্র একজন মুক্তমনা লেখক, বিজ্ঞানমনস্ক লেখকের বিচার নিশ্চিত করেছে।’ 

গণজাগরণ মঞ্চ সিলেটের সংগঠক একুশ তাপাদার বলেন, ‘অনন্ত দা আমাদের অনেকের চেয়ে অনেক অনেক বেশি এগিয়ে থাকা মানুষ ছিলেন। এগিয়ে থাকা মানুষদের বেলায় যেটা হয়, তাদের কাছ থেকে আসলে পাওয়ার থাকে অনেক কিছু। অনন্তদাকে হত্যার মধ্য দিয়ে আসলে জ্ঞান বিকাশের যে একটা ধারা আমাদের পেরিফেরির মধ্যে ছিল সেটা থেমে গেছে। আমি ওই সময়ের কথা মনে করতে পারি যে বিভৎস সময়ে অনন্তদাকে নিয়ে চিন্তা হতো, যখন দেশে একের পর এক হত্যাকাণ্ড শুরু হলো। আমরা তাকে বাঁচাতে পারিনি।’ 

অনন্ত হত্যার বিচার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যেভাবে বিচার হচ্ছে তারপরও আমরা আশা রাখতে চাই যে অনন্ত হত্যার বিচার হবে। আমরা চাই বাংলাদেশে মানুষ যেন স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে, বিজ্ঞানচর্চা করতে পারে, বেঁচে থাকার অধিকার যেন পায়।’

অনন্ত বিজয় দাশের লেখা পাঠ করে তাকে স্মরণ করেন মুক্তমনা লেখক রায়হান আবির। গানে গানে অনন্তকে স্মরণ করেন গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক উজ্জ্বল চক্রবর্তী। 

অনন্ত বিজয় দাশকে নিয়ে আরও স্মৃতিচারণ করেন, সম্মিলিতি নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত, সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম ও গণজাগরণ মঞ্চ সিলেটের সংগঠক পাপলু বাঙ্গালী। 

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে (৩২) হত্যা করা হয়। তিনি মুক্তমনা ব্লগে লিখতেন। যুক্ত ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গেও। দীর্ঘদিন সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলার পর সম্প্রতি অনন্ত বিজয় দাশের হত্যা মামলা সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে। 

 

এনপি-১৬