জকিগঞ্জে ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ

জকিগঞ্জ প্রতিনিধি


মে ১৩, ২০২০
০৮:৪০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ১৩, ২০২০
০৮:৪০ পূর্বাহ্ন



জকিগঞ্জে ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ

করোনা নামক মহামারি চলাকালে সিলেটের জকিগঞ্জের সুলতানপুর ইউনিয়নে সরকারি ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজন কুমার সিংহের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইকবাল আহমদ চৌধুরী একল, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা তুতিউর রহমান, সুলতানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস ছত্তার ও সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন।

অভিযোগের সঙ্গে গণস্বাক্ষরের একটি কপিও সংযুক্ত রয়েছে। ওই কপিতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের স্বাক্ষর রয়েছে। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজন কুমার সিংহ একটি তদন্ত টিম গঠন করেছেন। ওই তদন্ত টিম আগামীকাল বুধবার (১৩ মে) অভিযোগের সরেজমিন তদন্ত করবে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ত্রাণ বিতরণে একই পরিবারের কয়েকজনকে একাধিকবার ত্রাণ দেওয়া হলেও বঞ্চিত থেকে গেছেন অসহায়, এতিম, ছোট ব্যবসায়ী, প্রতিবন্ধী ও দিনমজুর লোকজন। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। অন্যদিকে প্রকৃত অসহায় লোকজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রাণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হলেন।

অভিযোগপত্রে কয়েকটি ওয়ার্ডের অনিয়মের উদাহরণ দিয়ে উল্লেখ করা হয়, ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার জয়নাল আবেদীন ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ ছায়দুল ইসলামের মাতা আছমা বেগম ভিজিডি তালিকায় ১০৫ ক্রমিকে গ্রহীতা থাকার পরও তার মেয়ে রুকিয়া বেগম জিআর ৯৪ ক্রমিকের গ্রহীতা। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নালুচক গ্রামের রেশমা বেগম ভিজিডি ৬১ ক্রমিকের গ্রহীতা আবার খাদ্যবান্ধবের ৯২ ক্রমিকেও উপকারভোগী। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে হাসনা বেগম ভিজিডি ১১৬ ক্রমিকে উপকারভোগী হওয়ার পরও তার ছেলে খাদ্যবান্ধব তালিকার ৯৭ ক্রমিকে উপকারভোগী। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে খাদ্যবান্ধব তালিকায় থাকা ৩৭ জনের মধ্যে ২৬ জনই বার বার জিআর তালিকায় উপকারভোগী। একই ওয়ার্ডে জিআর ৮২ ক্রমিকের চাল অন্যরা একাধিকবার গ্রহণ করেছেন। ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিলপার গ্রামের ৪০০ জন ভোটারের মধ্যে খাদ্যবান্ধব তালিকায় মাত্র দু'জনের নাম রয়েছে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের খাদ্যবান্ধব তালিকায় ৩৪ জনের নাম থাকলেও নওয়াগ্রামের আছে মাত্র একজনের নাম। জিআর তালিকায় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাজবন্দ গ্রামে ভুয়া ১৩ জনের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ত্রাণ আত্মসাৎ করা হয়েছে। একই পরিবারে স্বামী-স্ত্রী ও অন্য পরিবারে আপন দুই ভাই একই সঙ্গে জিআর তালিকা থেকে সুবিধা পান। আবার একই ওয়ার্ডের ৩১ জন খাদ্যবান্ধব তালিকার উপকারভোগীর মধ্যে ৭ জনকে একাধিকবার জিআর সুবিধা দেওয়া হয়। ওই ওয়ার্ডের ভিজিডির ১২৩ ক্রমিকের উপকারভোগীর স্বামী হেলাল আহমদ একাধিকবার জিআর তালিকায় সুবিধা গ্রহণ করেছেন। ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভিজিডি তালিকাভুক্ত ৭ জন আবার একাধিকবার জিআর সুবিধা নিয়েছেন।

অভিযোগকারীরা উল্লেখ করেন, সরকারের ত্রাণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রকৃত অসহায় ফলাহাট গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে দিনমজুর মোস্তাক আহমদ, মৃত ইছকন্দর আলীর প্রতিবন্ধী ছেলে আলতাফ হোসেন, স্বামীহীন জাহেদা বেগম, ২ নম্বর ওয়ার্ডের হাজারীচক গ্রামের মৃত মাহমুদুর রহমানের ছেলে দিনমজুর মাসুক আহমদ, গৃহিনী আইনুল বিবি, বিলপার গ্রামের গৃহিনী রেফা বেগম, দিনমজুর মুসলিম উদ্দিন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাজবন্দ গ্রামের দিনমজুর আব্দুল কুদ্দুস, প্রতিবন্ধী ফয়জুল হক, দিনমজুর আব্দুর রহমান, দিনমজুর শিহাব উদ্দিন, দিনমজুর আব্দুস সামাদ, সিরাজপাড়া গ্রামের দিনমজুর আতাউর রহমান, মজলি গ্রামের রাবিয়া বেগম, ভ্যানচালক আতাউর রহমান এবং মাজবন্দ গ্রামের ইসলাম উদ্দিন। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাওয়ারুন নেসার পরিবারে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলে ও স্বামীহীন মেয়ে, নাতি-নাতনী ও তরুণী মেয়েরা আছে। এর পরও ওই নারী ত্রাণ পাননি। গণিপুর গ্রামের একই পরিবারে দুই প্রতিবন্ধী মেয়ে ও মানসিক ভারসাম্যহীন একটি ছেলে থাকার পরও মেনী বেগম নামের নারী ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এছাড়াও ত্রাণ সহায়তা তালিকা থেকে বঞ্চিত আরও বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয় আবেদনে।

এ প্রসঙ্গে সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ভিজিডি ও খাদ্যবান্ধব থেকে যারা উপকারভোগী, তারা কোনোভাবেই ত্রাণ পাওয়ার কথা নয়। করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর পরই আমার ইউপি সচিব ও সদস্যদের নিয়ে সভা করে বলে দিয়েছি প্রত্যেক ওয়ার্ডে যেন অসহায় ও ত্রাণ পাওয়ার উপযোগী লোকজনের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। যারা ভিজিডি ও খাদ্যবান্ধবে উপকারভোগী, তাদেরকে ত্রাণ দেওয়া যাবে না এটা স্পষ্ট বলা হয়েছে। এর পরও দুয়েকজন সদস্য এদেরকে ত্রাণ দিয়েছেন, যার তাৎক্ষণিক যাচাই-বাছাই আমি করতে পারিনি। এর পরও যে নামগুলো নজরে এসেছে সেই সেগুলো বাতিল করেছি। উপকারভোগী কয়েকজনের নাম মঙ্গলবার (১২ মে) নতুন একটি তালিকায় দেখতে পেয়েছি। পরে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যের প্রত্যয়ন নিয়ে নামগুলো বাতিল করেছি।

তিনি বলেন, অনেকে একাধিকবার ত্রাণ পেয়েছে তা সত্য। যখন আমাদের কাছে এসে বলে তার ঘরে খাবার নেই, বাচ্চারা উপোস রয়েছে, তখন তাকে আবারও ত্রাণ না দিয়ে উপায় থাকে না। এখনও ত্রাণ পাওয়ার উপযোগী কারও নাম ইউপি সদস্য ত্রাণ সহায়তার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে থাকলে ওই লোকজন আমার কাছে সরাসরি এসে বললে আমি তাদেরকে ত্রাণ দেওয়ার ব্যবস্থা করব।

করোনা পরিস্থিতিতে কম সময়ের কারণে তিনি সকল এলাকায় ত্রাণ বন্টন নিয়ে তাৎক্ষণিক যাচাই-বাছাই করতে পারেননি বলে জানান।

মাজবন্দ গ্রামে ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়ে ত্রাণ আত্মসাৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি মোটেও ঠিক নয়। ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে কোনো ত্রাণ উত্তোলন করা হয়নি।

 

ওএফ/আরআর