আড্ডা থেকেই মানবিক যুদ্ধে মুরারিচাঁদিয়ানরা

নিজস্ব প্রতিবেদক


মে ১১, ২০২০
০৮:৫৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ১১, ২০২০
১০:৩৪ পূর্বাহ্ন



আড্ডা থেকেই মানবিক যুদ্ধে মুরারিচাঁদিয়ানরা

উদ্যোগটা এক অর্থে সাদামাটাই ছিল শুরুতে। তবে সম্মিলিত। আরও আট-দশটি উদ্যোগের মতই। তবু কোথায় যেন একটু অন্যরকম আবহ খুঁজে পান উদ্যোক্তারা। সংখ্যাটা তাই শুরুর পরিকল্পনার ৬০ জনে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ষাট পেরিয়ে শতকের কোঠা পেরিয়ে সোয়াশ'তে। ক্রমে বাড়ছে সে সংখ্যা। শুরুতে কথা ছিল ৬০টি পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর। তবে সহপাঠিদের ব্যাপক আগ্রহে এখন তা আর সংখ্যায় সীমাবদ্ধ না রেখে নিয়মিত অব্যাহত রাখার চিন্তা ভাবনা উদ্যোক্তাদের।  

বলা হচ্ছিল মুরারিচাঁদিয়ানদের কথা। করোনাকালিন সময়ে অসহায় হয়ে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর এই উদ্যোগের নাম ‘মানুষের কাছে মুরারিচাঁদিয়ান’। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ মুরারি চাঁদ কলেজের (এমসি কলেজ) ১৯৯৯-২০০০ সম্মান বর্ষের ক'জন মানবিক সহপাঠির উদ্যোগ। করোনা মহামারির এই সময়ে হঠাৎ বেকায়দায় পড়ে যাওয়া অসহায় মানুষের জন্য কিছু করার তাড়না থেকে এই উদ্যোগের জন্ম। ফেসবুকে, ম্যাসেঞ্জারে নিজেদের তাড়নার কথা ভাগাভাগি করতে করতেই এই উদ্যোগের শুরু।

জানা গেছে, করোনায় অসহায় হয়ে পড়া ১২৫ টি পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ছুটে গেছেন এমসি কলেজের ১৯৯৯-২০০০ সম্মান বর্ষের ক'জন মানবিক সহপাঠিরা। মানবিক কাজ করে প্রচার চান না বলে তারা অনেকটা নীরবেই এ কাজ শুরু করেছেন তারা। 

উদ্যোক্তাদের অন্যতম বর্তমানে একটি শীর্ষস্থানীয় এনজিও সংস্থার কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জয় সিলেট মিররকে বলেন, ‘নিভৃতে এ উদ্যোগের শুরুটা হয় মুলত 'মানুষের কাছে মুরারিচাঁদিয়ান' নামে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ থেকে। লকডাউনের এ বদ্ধ সময়টায় শুরুতে আমাদের উদ্দেশ্য ছিল নিছক আড্ডাই। ‘স্টে হোম’-এর এই অবসরে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বন্ধুদের এক ফ্রেমে এনে নষ্টালজিক এক ভারচুয়াল আড্ডায় মেতে উঠার প্রয়াস ছিল ক্যাম্পাস ছাড়ার দীর্ঘ ২০ বছর পর। এখান থেকেই শুরু।’ তিনি জানান, ‘গ্রুপে একে একে যুক্ত হতে থাকেন পরিচিত মুখ ফেসবুক বন্ধুরা। দিন গড়ায়। পার হতে থাকে আড্ডায়, গানে, গল্পে অলস সময়। কথায় কথায় আলোচনায় আসে দেশ-মানুষ। জেগে ওঠে মানবিক বোধও। ফলে প্রবাসে থাকা বন্ধুরা বিশেষ করে আগ্রহী হন। শুরু হয় তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা। সপ্তাহান্তেই তহবিল বড় হয়ে দাঁড়ায় ছয় অংকের ঘরে।অনুদান আসতে থাকে। সাড়া দেন আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যের সাথে কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে থাকা ১৯৯৯-২০০০ সালের এমসি কলেজ পড়ুয়া বন্ধুরা। তহবিল প্রসারিত হতে থাকে। দেশে থাকা বন্ধুরাও তাদের সামর্থ অনুযায়ী সহায়তার হাত বাড়িয়ে ধরেন।’ কাদের পাশে দাঁড়াবেন, কাদের সহযোগিতা করা হবে সেই তালিকাও তৈরি হতে থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নানা সংগঠন কাজ করছে। আমরা তাই একটু ভিন্ন উদ্যোগ নিলাম। যারা মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত। অথচ এই করোনার সময় তারা বেকায়দায় পড়ে গেছেন। ঘরে খাবার নেই অথচ লোকলজ্জার ভয়ে কারও কাছে হাত পাততেও পারছেন না এরকম মানুষের তালিকা তৈরি করে তাদের পাশে দাঁড়াই আমরা।’

চলছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্যাকেট করার কাজ।

 

এ পর্যন্ত ১২৫ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে মুরারিচাঁদিয়ানরা। প্রতি পরিবারকে জন্য চাল, পেয়াজ, লবন, ডাল, চিনি, তেল, সেমাই, সাবানসহ ১৪ কেজির খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট দেওয়া হয়েছে।

এসব খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে গিয়ে ব্যতিক্রমী আরেক অভিজ্ঞতা হয়েছে জানিয়ে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘অনেকে আমাদের বললেন ওষুধ কেনার টাকা নেই, ডায়ালসিস করাতে পারছেন না টাকার জন্য। এসব জানার পর খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি, চিকিৎসা এবং অর্থ সহায়তাও দেওয়ারও পরিকল্পনা করছি আমরা।’ 

তবে এই সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে ব্যাপকভাবে তহবিল সংগ্রহের কোন ইচ্ছে নেই জানিয়ে বললেন, ‘আমরা মুরারিচাঁদিয়ানরা নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী সহায়তা অব্যাহত রাখতে এ উদ্যোগে সম্পৃক্ত হবার উদাত্ত আহবান থাকবে শুধুই ১৯৯৯-২০০০ সালে এমসি কলেজে অনার্স পড়ুয়া বন্ধুদের প্রতিই।’ তাদের পাশাপাশি এরকম আরও স্বতন্ত্র উদ্যোগ নিয়েই আরও অনেকে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন বলে প্রত্যাশা করেন মুরারিচাঁদিয়ানের আড্ডাবাজ উদ্যোক্তারা।

 

এএফ-১১