সিলেট মিরর ডেস্ক
মে ১০, ২০২০
০৭:২৮ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ১০, ২০২০
০৭:২৮ পূর্বাহ্ন
সিলেট জেলার শ্রমিক শ্রেণির বড় অংশ হোটেল-রেস্টুরেন্ট, রিকসা, স’মিল, প্রেস, পরিবহন, লোড-আনলোড, রাইস মিল, নির্মাণসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সকল শ্রমিকদের জন্য অবিলম্বে রেশন ও খাদ্যসামগ্রী প্রদানের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা শাখা।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. সুরুজ আলী এবং সাধারণ সম্পাদক মো. ছাদেক মিয়া এক যৌথ বিবৃতিতে এই দাবি জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি তথা লকডাউন পরিস্থিতি শুরু হওয়ায় সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মহীন হয়ে পড়েছে জেলার অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকসহ সকল ধরণের পরিবহণ শ্রমিক, রিকশা-ঠেলা-দিনমজুর, স’মিল শ্রমিক, প্রেস শ্রমিক, দোকান কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক, দর্জি শ্রমিকসহ প্রায় লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষ। ঘরে বসে জমানো টাকা থেকে খরচ করে সংসার চালানোর মত আর্থিক সক্ষমতা এসব শ্রমিকদের নেই।
ফলে গত দেড় মাস ধরে কর্মহীন হয়ে এ মানুষগুলির জীবন কী দুর্দশায় কাটছে তা প্রতিদিনকার সংবাদ মাধ্যম থেকেও আঁচ করা যাচ্ছে। সন্তানের খাবার কেনার জন্য মায়ের মাথার চুল বিক্রি করা থেকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে অভাবে বিপর্যস্ত শ্রমজীবী মানুষ।গত দেড় মাসে সরকারি ত্রাণের নামে কেউ কেউ ৫-১০ কেজি চাল পেলেও অধিকাংশের ভাগ্যে তাও জোটেনি।
অন্যদিকে চরম স্বাস্থ্য ঝুকি নিয়ে লক্ষাধিক চা-বাবার শ্রমিক, জরুরী পণ্য ও ঔষুধ পরিবহণকারীসহ অন্যান্য পরিবহণ শ্রমিক, লোড-আনলোড শ্রমিক, ক্ষৌরকার, কামার, কমারসহ নানাবিধ শ্রমিক এখনো কাজ করে চলেছেন। সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নানারকম প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়া হলেও তার সিংহভাগই মালিকদের স্বার্থে ব্যবহৃত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় ন্যূনতম যেটুকু শ্রমিক-কর্মচারীদের নামে প্রণোদনা ও খাদ্যসহায়তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে তার লুটপাটের যেটুকু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তার চিত্রই ভয়াবহ। ত্রাণ লুটপাটের কারণে সরকার লোক দেখানো পদক্ষেপ হিসেবে ইউনিয়ন পর্যায়ে ৫০ জনের বেশি জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন , গত ১২ এপ্রিল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমনের প্রভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে শ্রম পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং চলমান শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সারাদেশে ক্রাইসিস মানেজমেন্ট কমিটি গঠন করে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে ডিসি অফিসে তালিকা পাঠানো হলেও এর কোনো তৎপরতা এখনপর্যন্ত দেখা যায় নি। অন্যদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও এই সময়ে নাগাল না পেয়ে শ্রমিকরা দিশেহারা হয়ে উঠছে। উপরন্তু বিভিন্ন জায়গায় দেখা যাচ্ছে স্থানীয় কাউন্সিলরদের পছন্দ এবং দলীয় বিবেচনায় ত্রাণ সামগ্রী প্রদানের জন্য কিছু তালিকা হচ্ছে। সেই তালিকায় শ্রমজীবী মানুষদের ঠাঁই হচ্ছে না। সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার মাধ্যমে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের সময় কেবল মাত্র ভোটারদের(জাতীয় পরিচয় পত্র দেখে) বিবেচনা করা হচ্ছে ফলে বাহির থেকে যেসব অজস্র শ্রমজীবী মানুষ এসে শহরের অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলেছে তারা এর আওতার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সরকার ত্রাণ কার্য মনিটরিং করার জন্য প্রত্যেক জেলায় একজন করে সচিবকে দায়িত্ব প্রদান করলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের ত্রাণ-প্রণোদনা এখনো নিশ্চিত করতে পারছে না। ফলে কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষ হতাশা ও গøানিতে জর্জরিত হয়ে আজ দিন কাটাচ্ছে। কোথাও কোথাও বিক্ষুব্ধ হয়ে সকল নিয়ম-বিধি উপেক্ষা করে রাস্তায় এসে অবস্থান করছে। কোথাও কোথাও দুর্নীতিগ্রস্থ জনপ্রতিনিধিদের লাঞ্চিত করাসহ বিভিন্ন অনভিপ্রেত ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। করোনা মোকাবেলার জন্য পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃত করণীয় "সংগনিরোধ কর্মসুচি" বাস্তবায়নের অপরিহার্য শর্ত হলো সকলের খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদান করা। ফলে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সামগ্রিক দায়িত্ব সরকার না নিলে অদূর ভবিষ্যতে যেকোন ধরনের পরিস্থিতি সৃস্টি হতে পারে বলে নেতৃবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করেন ।
নেতৃবৃন্দ কর্মহীন হয়ে পড়া মানবেতর জীবনযাপন করা শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য পর্যাপ্ত নগদ অর্থ বরাদ্দ, খাদ্যসহায়তা প্রদান, রেশনিং চালু, সরকারি প্রণোদনা ও ত্রাণ প্রদানের সকল ধরণের লুটপাট, অনিয়ন, দূর্নীতি বন্ধ করা, শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে জমাকৃত অর্থ হতে নগদ অর্থ প্রদান, কর্মরত সকল শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিতসহ বিশেষ ভাতা চালু, পণ্য পরিবহণসহ জরুরী সেবায় নিয়োজিত সকল পরিবহন শ্রমিক ও লোড-আনলোড শ্রমিকদের পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে বিশেষ ভাতা প্রদান, অবিলম্বে সকল চা-রাবার শ্রমিকদের মজুরি ও রেশনসহ ছুটি নিশ্চিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের করোনা ব্যতীত সাধারণ চিকিৎসা বিনামূল্যে প্রদান, কর্মহীন শ্রমিকদের ঘর ভাড়ার জন্য নগদ অর্থ প্রদান এবং গ্যাস-বিদ্যুত বিল সরকারের মাধ্যমে পরিশোধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সকল শ্রমিকদের দায় সরকারকে নেওয়ার দাবি জানান।
এনএইচ/বিএ-১২