নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ০৭, ২০২০
১০:৫৬ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ০৭, ২০২০
১০:৫৬ পূর্বাহ্ন
ছবি : সংগৃহিত
সিলেট নগরের ছাদগুলো যেন এখন একেকটি খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে ঘরবন্দী শিশু-কিশোরেরা বিকেলে ছাদেই নানা ধরনের খেলা আর আনন্দ-উচ্ছাসে মেতে উঠছে। অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, বাচ্চারা যেন ঘরে থাকতে থাকতে একঘেয়ে পরিস্থিতির মুখোমুখি না হয়, সেজন্য তাঁরা নিজেদের সন্তানদের ছাদে নিয়ে যাচ্ছেন। সন্তানদের সঙ্গে অনেকেই ছাদের পরিসর অনুযায়ী ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি ঘুড়ি ওড়ানোসহ নানা খেলায় অংশ নিচ্ছেন। আবার কোথাও একই বাসার একাধিক ফ্ল্যাটে থাকা পরিবারের শিশু-কিশোরেরা একত্রে খেলায় মেতে উঠছে।
নগরের সুবিদবাজার, উপশহর, মীরাবাজার, পনিটুলা, পাঠানটুলা, কুমারপাড়া, চৌখিদেখী, বাদাম বাগিচা, পীরমহল্লা, ভাতালিয়া, কাজলশাহ, শেখঘাট, শিবগঞ্জ, সোবহানীঘাট, চালিবন্দর, কালীবাড়ি, হাওলদারপাড়া, করেরপাড়া, বাগবাড়ি ও ভার্থখলাসহ সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের বেশকিছু এলাকায় গত দুই সপ্তাহ সরেজমিনে ঘুরেছেন এ প্রতিবেদক। তখন দেখা গেছে, কমবেশি সব বাসা-বাড়ির ছাদে বিকেল বেলা শিশু-কিশোরেরা খেলাধুলা ও আনন্দউচ্ছাসে মেতে উঠছে। দলবেঁধে তারা ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিণ্টন, ঘুড়ি ওড়ানো, দৌঁড়ঝাঁপসহ নানা ধরনের খেলা খেলছে। নিজেরা হইচই করে খেলায় অংশগ্রহণের পাশাপাশি উপভোগ করছে।
বাগবাড়ি এলাকার কিশোর সুমিত দাশ অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সে জানায়, করোনাকাল শুরু হওয়ার প্রথম এক সপ্তাহ ঘরের ভেতরে বসে বই পড়ে, টিভি দেখে ও কম্পিউটার গেমস খেলেই তার সময় কেটেছে। হঠাৎ তার বাসার ছাদের কথা মনে পড়েছে। তখন সেখানে বিকেল বেলা খেলাধূলা করার ভাবনাচিন্তা মাথায় ঢুকে। বাবা-মাকে সে কথা জানাতে তাঁরা সম্মতি দেন। এরপর প্রতিদিন নিয়ম করে তারা দুই ভাই ছাদে ব্যাডমিণ্টন খেলছে। এ সময় তারা পাশের বাসার ছাদে কয়েকজনকে পালা করে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতেও দেখছে।
উপশহর এলাকার ‘সি’ বøকে নাহিয়ান খানদের বাসা। সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। পাঁচতলা বাসার চারতলায় তারা ভাড়া থাকে। তার বাবা সরকারি চাকুরিজীবী, মা গৃহিণী। নাহিয়ানদের পাঁচতলা বাসা পুরোটাই গত দেড়মাস ধরে ‘স্বেচ্ছা রকডাউন’ করে রেখেছে ভাড়াটিয়া সবাই মিলে। এ বাসায় সবমিলিয়ে ৭ জন কিশোর-কিশোরী রয়েছে। বিকেল হলেই তারা ছাদে একসঙ্গে খেলতে যায়। একেকদিন একেক খেলায় তারা মত্ত থাকে। তবে বেশির ভাগ সময়েই তারা ব্যাডমিণ্টন খেলা নতুবা ঘুড়ি ওড়ায়। নাহিয়ান বলে, ‘ব্যাডমিণ্টন খেললেও আস্তে আস্তে আমরা ফ্লাউয়ারে ব্যাড দিয়ে আঘাত করি। কারণ, জোরে মারলে ফ্লাউয়ার নিচে পড়ায় যাওয়ার শঙ্কা থাকে। অন্যদিকে, ঘুড়ি ওড়ানোটা খুবই মজার। তবে বাতাস না থাকলে ঘুড়ি ওড়ানো যায় না, এটা একটা সমস্যা।’
সোবহানীঘাট এলাকায় মাজেদা আক্তারদের বাসা। সে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা হারুনুর রশীদের মুঠোফোনের মাধ্যমে তার সঙ্গে গতকাল বুধবার বিকেরে কথা হয়। তখন মাজেদা ছাদে তার বাবার সঙ্গে গাছের পরিচর্যা করছিল। মাজেদা বলে, ‘এতদিন ধরে স্কুলে যাচ্ছি না। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে নিয়মিত মোবাইল ফোনে কথা হলেও দেখা হচ্ছে না। ঘরে থাকতে থাকতে কেমন একটা দমবন্ধ ভাব চলে এসেছে। তবে যখন ছাদে আসি, তখন যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। কখনো ছাদে বাবা-মায়ের সঙ্গে গাছের যতœ নেই, আবার কখনো নিজের মতো করে খেলি। আমার বন্ধু-বান্ধবেরা জানিয়েছে, তারাও ছাদে বিকেলবেলা খেলাধুলা করে সময় কাটাচ্ছে।’
একাধিক অভিভাবক জানিয়েছেন টানা ঘরবন্দী জীবনযাপন করতে করতে বাচ্চারা যেন বিষন্নতার শিকার না হয়, সেটিকে তাঁরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। এজন্য তাঁরা বাচ্চাদেরও টুকটাক গৃহস্থালির কাজে অংশ নেওয়াচ্ছেন। একই সঙ্গে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে যেন নানা বিষয়ে তাদের পাঠাভ্যাস বাড়ে, সেদিকেও খেয়াল রাখছেন। টিভিতে ভালো ভালো অনুষ্ঠানগুলো দেখতে বাচ্চাদের উৎসাহিত করছেন। আর, শারীরিকভাবে সবল রাখতে নিয়মিত বাচ্চাদের ছাদে খেলাধুলা করতে উৎসাহ দিচ্ছেন। কখনো কখনো বাচ্চাদের খেলায় তাঁরাও অংশ নিচ্ছেন। শেখঘাট এলাকার গৃহিণী নাহিদা পারভীন সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমার ছেলে দশম শ্রেণিতে পড়ে। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে মানুষ যখন ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে, তখন আমরাও ঘরবন্দী হয়ে পড়ি। তবে ঘরের টুকটাক কামকাজ করে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর সময় চলে যাচ্ছিল। হঠাৎ খেয়াল করি, ছেলের যেন সময় কাটছে না। সারাক্ষণ কম্পিউটার কিংবা মোবাইলে গেমস খেলা নিয়ে পড়ে রইছে। এটা দেখেই তাকে প্রতিদিন ছাদে খেলার জন্য উৎসাহ দিয়েছি। ছেলের সঙ্গে কখনো তার বাবা, কখনো আমি সঙ্গী হচ্ছি। এখন তার ও আমাদের সময় ভালোই কাটছে। আশপাশের বাসাগুলোতেও দেখছি, ছেলেমেয়েরা খেলায় মেতে উঠছে, আবার বয়স্করা ছাদে গল্পগুজব করছেন নতুবা হাঁটছেন। তবে এসব দৃশ্য করোনাকালের আগে খুব একটা দেখা যায়নি।’
এস-০১/এএফ-০১