নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ০৬, ২০২০
১০:১৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ০৬, ২০২০
১০:১৩ পূর্বাহ্ন
বৃহত্তর সিলেটের চার জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই শ পেরিয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, সিলেট বিভাগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৫৮। এর মধ্যে হবিগঞ্জ জেলায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮৯। এরপরই রয়েছে সিলেট জেলা। এ জেলায় ৭৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এরপরই রয়েছে যথাক্রমে সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলা। এ দুটি জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৫৭ ও ৩৪ জন। এ ছাড়া বিভাগে করোনা আক্রান্ত তিনজন মারা গিয়েছেন এবং সুস্থ হয়েছেন মোট দুইজন।
প্রকাশিত তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি থাকবে। কারণ, এ দুটি জেলাতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে বেশিসংখ্যক মানুষ সম্প্রতি ফিরেছেন। তবে হবিগঞ্জের ক্ষেত্রে অনুমান ঠিক থাকলেও সুনামগঞ্জের চেয়ে তুলনামূলকভাবে সিলেট জেলাতেই গতকাল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ধরা পড়েছে। চার জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলা রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। তবে তার সংখ্যাও অর্ধশতাধিকেরও বেশি। অন্যদিকে মৌলভীবাজার জেলা চতুর্থ ও শেষ অবস্থানে থাকলেও সেখানেও আক্রান্তের পরিমাণ কম নয়।
স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি মে মাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে। কারণ, এটি এখন শহর ছাড়িয়ে গ্রাম পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে। তাই সবচেয়ে ভালো হলো, এ সময়টাতে ঘরের ভেতরে অবস্থান করা এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। এতে করোনাভাইরাস এড়ানো অনেকটাই সম্ভব হবে। একই সূত্রের বক্তব্য অনুযায়ী, বিভাগীয় ও জেলা শহর, উপজেলা সদর ও পৌর এলাকা ছাড়াও প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর অনেক বাসিন্দাদের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে। এ বিষয়টি উদ্বেগের। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থাকার পরিবর্তে অনেকে যত্রতত্র ঘোরাফেরা ও আড্ডায় ব্যস্ত থাকছেন, ফলে অনেক সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে, সেবা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী এবং স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা আক্রান্ত হয়েছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলার তিনজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, পরিসংখ্যান ও সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের চার জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে হবিগঞ্জ জেলা। এখানে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে গার্মেন্টসকর্মী ও বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্তরা নিজেদের বাড়ি ফিরেছেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর সরকার কর্তৃক সাধারণ ছুটি ঘোষণার পরপরই তাঁরা বাড়ি ফিরে আসে। তবে বাড়ি ফিরে হোম কোয়ারেন্টিন না মেনে অবাধে যেখানে-সেখানে ঘোরাফেরা আর জমিতে বোরো ধান কাটার কাজে নিয়োজিত হওয়ার কারণে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। গত সোমবার হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার আগে সিলেট মিরর-এর সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। তিনি তখন জানিয়েছিলেন, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ ফেরত কর্মী-শ্রমিকদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে।
সিলেটের সচেতন নাগরিকদের অভিমত, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিভাগের চারটি জেলাই ‘লকডাউন’ অবস্থায় রয়েছে। অথচ এ অবস্থায়ও হাটবাজারে মানুষের ভিড়, গাদাগাদি করে চলাফেরা করা এবং পাড়া-মহল্লা-গ্রামে আড্ডা চলছে। এতে কারোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়টির দিকে কড়াকড়ি দৃষ্টি দেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন সচেতন মহল। তাঁদের মতে, প্রয়োজনে ভীতি প্রদর্শন করে হলেও মানুষকে আটকানো প্রয়োজন। তবে স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সামাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অনেককে জরিমানাও করা হচ্ছে। তবে তাঁরা এও স্বীকার করেছেন, অনেক মানুষ কারণ ছাড়াই বাসার বাইরে বেরোচ্ছেন। এতে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনিসুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘প্রতিদিনই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে এতে ভয় বা আতঙ্ক পেলে চলবে না। সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলতে হবে।’
এস-০১/এএফ-০১