নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ০৫, ২০২০
১০:২২ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ০৫, ২০২০
১০:২২ পূর্বাহ্ন
দীর্ঘ দেড় মাসেরও বেশি সময় পর অবশেষে চালু হতে চলেছে দোকানপাট ও শপিং মল। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সীমিত পরিসরে ব্যবসা-বাণিজ্য চালুর করতে গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে নির্দেশনা পাঠিয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন। তবে তাঁরা এও বলেছেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে মানুষজন এখন ঘরবন্দী। তাই ঈদের কেনাকাটা করতে ক্রেতারা দোকানে আসবেন তো?
মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনা অনুযায়ী, আগামী ১০ মে থেকে বেশ কয়েকটি শর্ত মেনে সারা দেশে হাট-বাজার, ব্যবসাকেন্দ্র, দোকানপাট ও শপিং মলগুলো সকাল ১০টা থেকে বেলা চারটা পর্যন্ত সীমিত পরিসরে খোলা রাখা যাবে। এক্ষেত্রে বড় শপিং মলের প্রবেশমুখে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শপিং মলে আসা যানবাহনকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বেচাকেনার সময় ক্রেতা-বিক্রেতাদের পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
সরকারি এ নির্দেশনার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সিলেটের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, গেল পয়লা বৈশাখে দোকানপাট বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা বেচাকেনা করতে পারেননি। এ অবস্থায় তাঁদের আশঙ্কা ছিল, সরকারি সাধারণ ছুটির কারণে আসন্ন ঈদুল ফিতরের ব্যবসাও তাঁরা করতে পারবেন না। হঠাৎ করে এমন নির্দেশনা আসায় তাঁদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। কারণ, দীর্ঘ সময় ধরে দোকানপাট বন্ধ থাকায় তাঁরা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন। ঈদের আগে দোকানপাট খুলে দেওয়ায় এ ক্ষতি তাঁরা কিছুটা হলেও পুষিয়ে উঠতে পারবেন।
জিন্দাবাজার এলাকার একটি বিপণিবিতানের কাপড়ের ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেন বলেন, ‘গত দেড় মাসে দোকান বন্ধ থাকায় আয়হীন অবস্থায় রয়েছি। এরই মধ্যে জমানো টাকা শেষ হয়ে গেছে। ঈদের আগে দোকানপাট সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়ায় ভালো হয়েছে। নতুবা না খেয়েই থাকত হতো। এখন ঈদের কেনাকাটা করতে মানুষজন বিপণিবিতানগুলোতে এলেই হলো। মানুষজন করোনাভাইরাসের কারণে এখনও ভীতিতে রয়েছে, তাই দোকানপাটে তাঁরা কেনাকাটা করতে আসবেন কি না, এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’ নয়াসড়ক এলাকার দুজন ব্যবসায়ী জানান, ঈদের আগে দোকানপাট খুলে দেওয়ায় ব্যবসায়ী হাঁফ ছেড়েছেন। দীর্ঘদিন দোকানপাট বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁরা বিপাকে পড়েছিলেন। এ দমবন্ধ অবস্থার কিছুটা অবসান ঘটল, দোকান চালুর নির্দেশনা দেওয়ার পর।
তবে দোকানপাট ও শপিং মল চালুর ঘোষণায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাঁদের ভাষ্য, করোনাভাইরাসের বিস্তার এখনো চলছে। এমনিতে ‘লকডাউন’ চলা সত্তে¡ও মানুষজন দেদারসে বাসার বাইরে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বেরোচ্ছেন। আর, এখন সীমিত পরিসরে দোকানপাট চালুর সুযোগ নিয়ে অনেকেই সামাজিক দূরত্ব না মেনে বাইরে চলাফেরা করবেন। এতে করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফেসবুকে আবার কেউ কেউ এও বলেছেন, দোকানপাট ও শপিংমলে যেন কঠোরতার সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়, সেদিকে প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের নজর রাখা উচিত।
সিলেট নগরের বাসিন্দা ও মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক গবেষক হাসান মোরশেদ তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘বাজে সিদ্ধান্ত। আরও অন্তত দু-সপ্তাহ দরকার ছিল। এখন যাঁর যাঁর কাÐজ্ঞানে বাঁচার চেষ্টা।’ সিলেটের সাংবাদিক ছামির মাহমুদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যেখানে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, সেখানে দোকান-শপিংমল খোলার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হবে। এ সিদ্ধান্তের কারণে লাখো মৃত্যু দেখতে হতে পারে বাংলাদেশকে। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করো।’ বিয়ানীবাজারের সাংবাদিক আহমেদ ফয়সল তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘যাঁরা লকডাউন মানেননি, তাঁদের জন্য উন্মুক্ত হলো শপিং মল। যাঁরা লকডাউন মেনে ঘরে ছিলেন, তাঁরা ঘরে থাকুন। হতাশ না হয়ে সার্কাস দেখুন।’ সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহ দিদার আলম চৌধুরী নবেল তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘বিপণিবিতান ও দোকানপাট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। কাপড় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে গোটা জাতিকে জ্বলন্ত উনুনে ঠেলে দেওয়া হলো।’
এস-০১/এএফ-০১