লকাডাউন শিথিল, সিলেটে উধাও স্বাস্থ্যবিধি

নিজস্ব প্রতিবেদক


আগস্ট ১৯, ২০২১
০৪:২৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ১৯, ২০২১
০৪:২৬ পূর্বাহ্ন



লকাডাউন শিথিল, সিলেটে উধাও স্বাস্থ্যবিধি

লকডাউন শিথিলের পর থেকে সিলেটে কমতে শুরু করেছে মাস্কের ব্যবহার। হাট-বাজার থেকে শুরু করে অফিস, আদালত প্রায় সব জায়গায় একই অবস্থা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে, বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার না করলে আবারও বেড়ে যেতে পারে করোনার সংক্রমণ। 

মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার বের হওয়াদের মধ্যে বেশিরভাগের মুখেই মাস্ক নেই। যাদের আছে তারাও রেখেছেন থুতনিতে। গণপরিবহন, হাট-বাজার সব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। শপিং মলেও বাড়ছে মানুষের ভিড়। এছাড়া ছুটির দিনগুলোতে পর্যটন স্পটগুলোতেও ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। এর আগে বিধিনিষেধ চলাকালে নগরে মানুষের উপস্থিতি ছিল কম। যারাই বের হয়েছিলেন তাদের বেশিরভাগের মুখেই ছিল মাস্ক। তবে জনজীবন স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উধাও হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি। 

মাস্ক না পরার কারণ হিসেবে তারা নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন। কেউ বলছেন, মাস্ক পরলে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, কারো আবার মাস্ক বৃষ্টিতে ভিজে গেছে, কেউবা মনে করছেন টিকা নেওয়ার পর আর মাস্ক ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। 

নগরের বন্দরবাজার এলাকায় কেনাকাটা করতে আসা সাদ উদ্দিন সিলেট মিররকে বলেন, ‘বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ায় মাস্ক ফেলে দিয়েছি। ভেজা মাস্ক মুখে রাখা যায় না।’

জিন্দাবাজার এলাকায় রুবি বেগম বলেন, ‘করোনার দুই ডোজ টিকা নিয়েছি। টিকা নেওয়ার পরও যদি মাস্ক ব্যবহার করতে হয় টিকা নেওয়ার প্রয়োজন কী?’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলতি বছরের ৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ চলছিল। ঈদের পর ২৩ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়, যা প্রথমে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কার্যকর ছিল। পরে বিধিনিষেধ ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়। 

কঠোর বিধিনিষেধের কারণে সিলেটে বর্তমানে সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত সোমবার সকাল আটটা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে ৩৫৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যা চলতি মাসের মধ্যে একদিনে সর্বনি¤œ। এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘণ্টায় ৩৫৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। চলতি মাসের প্রথম দিন বিভাগে একদিনে সর্বোচ্চ ৯৯৬ জনের করোনা শনাক্তের খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত এক সপ্তাহে সিলেটে সংক্রমণ নি¤œমুখী রয়েছে। 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ কিছুটা কমে এলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আবারও অবস্থা খারাপ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। 

সিলেটে চলতি বছরের প্রথম দুই মাস সংক্রমণ ছিল নিয়ন্ত্রণে। মার্চের শেষদিকে বাড়তে থাকে সংক্রমণ ও মৃত্যু। এপ্রিলের প্রথম দিকেও বাড়তির দিকে থাকলেও সে সময় চলা বিধিনিষেধে তা কমতে শুরু করে। তবে জুলাইয়ে সংক্রমণ বাড়ে আশঙ্কাজনক হারে। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ডে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে সিলেট। তারসঙ্গে হাসপাতালে শয্যা ও আইসিইউ সঙ্কট দেখা দেয়। হাসপাতালে শয্যা বাড়িয়েও রোগী জায়গা দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। 

সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত সিলেট মিররকে বলেন, ‘বর্তমানে সংক্রমণ কিছুটা কমতির দিকে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া উচিত নয়। মাস্ক ব্যবহার বা স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আবারও অবস্থার অবনতির শঙ্কা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। কারণ করোনা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে মাস্ক ব্যবহার ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে সিলেটে অভিযান চলমান আছে কি না এমন প্রশ্নে সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার শাম্মা লাবিবা অর্ণব (কোভিড-১৯ সেল) সিলেট মিররকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে আমাদের আপাতত কোনো অভিযান পরিচালিত হচ্ছে না। এছাড়া মাস্ক ব্যবহার যার যার ব্যক্তিগত সচেতনতা। অভিযান করে সেটা বাড়ানো সম্ভবও না।’

এনএইচ/আরসি-০১