পরিকল্পনা করেই পালিয়েছে সিলেটের তিন মাদরাসা শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক


আগস্ট ১৭, ২০২১
০৭:৪৮ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ১৭, ২০২১
০৯:০৯ অপরাহ্ন



পরিকল্পনা করেই পালিয়েছে সিলেটের তিন মাদরাসা শিক্ষার্থী
সর্বশেষ অবস্থান ছিল রেলওয়ে স্টেশনে

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার একটি মাদরাসার নিখোঁজ হওয়া তিন শিক্ষার্থীর খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। নিখোঁজের পর প্রথমদিকে পুলিশ তাদের অবস্থান সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের আশেপাশে শনাক্ত করলেও এখন তারা কোথায় আছে তা নিশ্চিত হতে পারছে না।

পুলিশের ধারণা, পরিকল্পনা করেই একসঙ্গে পালিয়েছে এই তিন শিক্ষার্থী। তাদের উদ্ধারে প্রযুক্তির সহায়তার পাশাপাশি সবধরণের চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। শিগগির তাদের উদ্ধার সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা স্থানীয় দুই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিখোঁজ তিনজনই দক্ষিণ সুরমার জালালপুরের মঞ্জলাল দারুল হিফজ ও দারুল ক্বিরাত মাদরাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে গত ৩১ জুলাই সকাল ৯টার দিকে মাদরাসা থেকে নিখোঁজ হয় মো. হোসাইন আহমদ রুহান (১৬) ও মো. নাহিম আহমদ (১৮)। এর তিনদিন পর ৩ আগস্ট একই মাদরাসার ছাত্র সাজ্জাদ মিয়া (১৬) নিখোঁজ হয়।

রোহান ও নাহিম নিখোঁজের বিষয়ে গত ১ আগস্ট মোগলাবাজার থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি নম্বর ৫১) করেন মাদরাসার প্রধান শিক্ষক হাফিজুল ইসলাম। সাজ্জাদের সন্ধান চেয়ে গত ৮ আগস্ট সাজ্জাদ মিয়ার বোন রাশেদা বেগম দক্ষিণ সুরমা থানায় আরেকটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর-৩৩০) করেন। 

নিখোঁজ তিন মাদরাসা শিক্ষার্থী উদ্ধারের সবশেষ অবস্থান সম্পর্কে সিলেট মহানগর পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘নতুন কোনো অগ্রগতি নেই। প্রযুক্তির সহায়তায় সর্বশেষ তাদের অবস্থান দেখা গেছে ময়মনসিংহের আশপাশে। এরপর আর কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, মোগলাবাজার থানা এলাকা থেকে রুহান নামে যে ছেলেটি নিখোঁজ রয়েছে তাঁর সঙ্গে একটি ফোন থাকতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। সে বাসায় যোগাযোগের সময় ফোনের দোকান থেকে মোবাইল ফোনে কথা বলছে বলে আমরা ধারণা করছি। তবে তারা তিনজনই এখনও দেশেই আছে বলে আমাদের ধারণা।’ তাদের উদ্ধারে চেষ্টা অব্যাহত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করি শিগগির তাদের উদ্ধার করতে পারব।’

এই তিনজনের সবশেষ অবস্থান কবে শনাক্ত করা গেছে জানতে চাইলে দক্ষিণ সুরমা থানার এই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, এই বিষয়টি আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ‘তিনজন পরিকল্পনা করেই একসঙ্গে নিখোঁজ হয়েছে। মোগলাবাজার থানা এলাকা থেকে নিখোঁজ ২ জন যাওয়ার আগে দক্ষিণ সুরমা এলাকার ঐ শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে পালানোর দিন তাকেও সঙ্গে নিয়ে যায়। সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় এই তিনজনের সবশেষ অবস্থান নিশ্চিত করা গেছে।’ 

এই বিষয়ে তিনি বলেন, তিনজনের কারও সঙ্গে কোনো মোবাইল ফোন নেই। তবে রুহানের সঙ্গে একটি সিম আছে বলে তদন্তের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি। সিলেট থেকে তারা ট্রেনে চড়েই গেছে। কারণ সেই সিমটি সবশেষ সিলেট রেলওয়ে স্টেশনেই শনাক্ত করা গেছে। এরপর তাদের আর কোনো অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। 

তিনি আরও বলেন, আমরা সমস্ত জায়গায় খোঁজ নিচ্ছি। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তাও নেওয়া হয়েছে। আশা করি দ্রুত তাদেরকে আমরা উদ্ধার করতে পারব। 

এর আগে রোহান ও নাহিম নিখোঁজের বিষয়ে মোগলাবাজার থানায় সাধারণ ডায়রিতে মাদরাসার প্রধান শিক্ষক হাফিজুল ইসলাম উল্লেখ করেন, ‘৩১ জুলাই ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত রুহান ও নাহিম পড়াশুনা করছিল। পৌঁনে ১০টা থেকে তাদেরকে খোঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের অভিভাবকদের এ বিষয়টি অবগত করা হয়। কিন্তু, অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাদের সন্ধান মিলেনি। নিখোঁজের সময় তাদের গায়ে সবুজ রঙের পাঞ্জাবি ও সাদা পায়জামা ছিল।’

তিনি আরও বলেন, এই দুজন মাদরাসা থেকে নিখোঁজ হওয়ায় থানায় সাধারণ ডায়রি করেছি। কিন্তু, সাজ্জাদ নামের ছেলেটি বাড়িতে ছিল। আমরা জানতাম না সাজ্জাদও নিখোঁজ হয়েছে।

অন্যদিকে সাজ্জাদের বোন রাশেদা বেগম জানান, ২৭ জুলাই তার বাবার মৃত্যু হয়। এরপর ৩ আগস্ট তার ভাই মাদরাসায় যাওয়ার জন্য রওয়ানা হয়। ৫ আগস্ট তারা মাদরাসার প্রধান শিক্ষককে ফোন দিয়ে ভাইয়ের খোঁজ নিলে জানতে পারেন ভাই মাদরাসায় যায়নি। 

তিনি বলেন, ‘সাজ্জাদ কিছুটা সহজ-সরল। নিজস্ব মোবাইল ফোন নেই। বাড়িতে এলে বাসার মোবাইল নম্বর থেকে রুহানের সঙ্গে কথা বলতো। রুহানের নিজস্ব মোবাইল ফোন ছিল। বিষয়টি তার পরিবারও জানতো না বলে আমরা পরে জেনেছি। রুহানই আমার ভাইকে নিয়ে কোথাও গেছে।’

আরসি-১১/এএফ