দ্বিতীয় দিনে সিলেটে টিকা নিয়েছেন ২৪ হাজার ২৯৪ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক


আগস্ট ০৯, ২০২১
০৪:৩৩ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৯, ২০২১
০৪:৪৩ অপরাহ্ন



দ্বিতীয় দিনে সিলেটে টিকা নিয়েছেন ২৪ হাজার ২৯৪ জন

টিকাদান ক্যাম্পেইনের দ্বিতীয় দিনেও সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় টিকা নিতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে আসা লোকজনকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও অনেকে টিকা পাননি। অত্যধিক ভিড়ের কারণে কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধিও ছিল উপেক্ষিত। 

গত শনিবার দেশব্যাপী একদিনের জাতীয় কোভিড-১৯ টিকাদান ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়। তবে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় আরও দুদিন এই ক্যাম্পেইন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার (৮ আগস্ট) টিকার জন্য অনেকেই কেন্দ্রে যান। মহানগরের ৮১টি কেন্দ্রে এ দিন ২৪ হাজার ২৯৪ জনকে টিকা দিয়েছে সিসিক। 

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন টিকাকেন্দ্র ঘুরে মানুষে দীর্ঘ সারি দেখা যায়। সকাল ৯টা থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় কেন্দ্রেই সকাল ৬টা থেকে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে যান। ৯টার আগেই টিকাকেন্দ্রের সামনে ২০০ থেকে ৩০০ মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরও বাড়ে। প্রতি কেন্দ্রে নির্দিষ্ট টিকার চেয়ে মানুষের উপস্থিতি ছিল তিন-চারগুণ বেশি। তাই এ দিন টিকা নিয়েছেন যত মানুষ, এরচেয়ে বেশি মানুষ ফিরেছেন বিফল হয়ে। পূর্বে নিবন্ধিতদেরও টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও টিকাকার্ড নিয়ে যাওয়া অনেককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে। আর স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে লাইনে না দাঁড়িয়েই অনেকে টিকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

একসঙ্গে অনেক মানুষের উপস্থিতির কারণে কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধিরও কোনো বালাই ছিল না। ছিল না শারীরিক দূরত্ব বা মাস্ক পরার প্রবণতা। নগরের উপশহরের আই একাডেমি কেন্দ্রে সকালে টিকা নিতে যান আব্দুল কাইয়ুম। তিনি পূর্বে সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করে এখনও ম্যাসেজ পাননি। রবিবার নিবন্ধন কার্ড নিয়ে কেন্দ্রে যান। কিন্তু তাকে টিকা দেওয়া হয়নি। তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘টিকাকার্ড নিয়ে কেন্দ্রে গেছি। কিন্তু আমি পূর্বে নিবন্ধন করেছি বলে টিকা দেওয়া হয়নি।’

একই অভিযোগ করেন নগরের সৈয়দ মইনুদ্দীন নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে টিকা নিতে যাওয়া মইন উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে খবর দেখে রবিবার সকালে আম্মাকে নিয়ে এই কেন্দ্রে টিকা নিতে যাই। কিন্তু সেখানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর তারা জানায় সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করায় এখানে টিকা দেওয়া হবে না।’ নগরের কেন্দ্রে কেন্দ্রে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ছিল বেশি। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে লাইন ভেঙ্গেই অনেকে টিকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ লাইনে দাঁড়ানো সাধারণ মানুষের। 

নগরের চারাদিঘির পাড় এলাকার বেবী কেয়ার একাডেমি কেন্দ্রে এমন বিড়ম্বনার কারণে নিজের স্ত্রীকে টিকা দেওয়াতে পারেননি তানভীর সিদ্দিকী।

তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘গত শনিবার টিকা নিতে গেলে এই কেন্দ্রে সিরিঞ্জ শেষ হয়ে যায়। পরে আমার স্ত্রী টিকা না পেয়ে ফিরে আসেন। রবিবার সকাল ৯টার আগে লাইনে দাঁড়ান তিনি। তবে এর মধ্যে দিয়ে এলাকার কিছু ছেলে তাদের পরিচিতদের সরাসরি টিকা দেওয়ায়। ফলে আমার স্ত্রীসহ যারা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তারা টিকা পাননি। দুপুর সাড়ে ১২টায় টিকা শেষ হয়ে যাওয়ায় টিকা না পেয়েই আমার স্ত্রী ফিরে আসেন। টানা দুই দিন ৪ ঘণ্টা করে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা পাননি তিনি।’

একই অভিযোগ নগরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের রাজপাড়াস্থ সূর্যের হাসি ক্লিনিকে টিকা নিতে যাওয়া শাহেদা আক্তার বাবলির। তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘সকাল ৯টার দিকে বৃদ্ধ মাকে নিয়ে টিকাকেন্দ্রে যাই। লাইনে দাঁড়ানোর পর দেখতে পারি অনেকেই লাইনে না দাঁড়িয়েও সরাসরি টিকা নিয়ে নিচ্ছেন। ফলে টিকা শেষ হয়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ বৃদ্ধ মাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকা পাইনি।’

এ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘যারা টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ শতাংশই পূর্বে নিবন্ধন করা। ফলে এই অভিযোগ সত্য নয়। আর কোনো স্থানে যদি স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে লাইন ভেঙ্গে টিকা নেওয়ার ঘটনা ঘটে তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে জানানো উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি কেন্দ্রে ২০০ জনকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যেহেতু গ্রহীতার সংখ্যা বেশি, এ জন্য তাদের কথা চিন্তা করে কেন্দ্রভেদে অতিরিক্ত আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর বেশি টিকা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’

স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় সিলেট মিররকে বলেন, ‘গণটিকা কেন্দ্রে শারীরিক দূরত্ব মানাটা কষ্টকর। তবে সিলেটে মাস্ক ছাড়া কাউকে টিকাকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।’ টিকাকেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে অন্যান্য জেলা থেকে সিলেটের অবস্থা ভালো বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

এনএইচ/আরসি-০৫