নগরে চলছে দ্বিতীয়দিনের গণটিকা, চলবে কালও

নিজস্ব প্রতিবেদক


আগস্ট ০৮, ২০২১
০৪:১৪ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৯, ২০২১
১২:৫২ পূর্বাহ্ন



নগরে চলছে দ্বিতীয়দিনের গণটিকা, চলবে কালও
# বিভ্রান্তি অব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি # টিকাকেন্দ্রে ভিড়, কিন্তু পাননি অনেকেই

-ফাইল ছবি

সিলেটসহ সারাদেশে গতকাল শনিবার টিকাদান ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়েছে। টিকার জন্য কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ব্যাপক ভিড় ছিল। কিন্তু বিভ্রান্তি, অব্যবস্থাপনা ও টিকা সল্পতার কারণে অনেকেই টিকা পাননি। 

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বরাদ্দ টিকার বিপরীতে বেশি গ্রহীতা টিকাকেন্দ্রে যাওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকায় আজ রবিবার ও আগামীকাল সোমবারও টিকাদান ক্যাম্পেইন চলবে বলে জানিয়েছেন তারা। 

গতকাল শনিবার নগরের বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে গিয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টিকা নিতে আসা মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। ভিড়ের কারণে বেশিরভাগ কেন্দ্রেই স্বাস্থ্যবিধি ছিল উপেক্ষিত। 

নগরের ৮১টি টিকাকেন্দ্রের প্রতিটিতে শনিবার ৩০০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রায় সব কেন্দ্রেই টিকা নিতে আসেন নির্ধারিত টিকার দ্বিগুণেরও বেশি মানুষ। ফলে অর্ধেকের বেশি মানুষকেই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই সকাল নয়টার আগে থেকে টিকা লাইনে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছেন। টিকা না পাওয়ায় তারা ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। যারা টিকা পেয়েছেন তাদেরকেও লাইনে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। টিকদান ক্যাম্পেইন নিয়েও বিভ্রান্তিও আছে। টিকা নিতে আসাদের মধ্যে অনেকেই জানতেন গণটিকা দেওয়া হবে একদিন। ফলে তারা গতকাল টিকাকেন্দ্রে ভিড় করেছেন। 

নগরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কিশোরী মোহন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, টিকা না পেয়ে অনেকেই বিক্ষোভ করছেন। তাদের অভিযোগ সকাল থেকে দাঁড়িয়ে থাকার পর হঠাৎ তারা জানতে পারেন টিকাকার্ড শেষ হয়ে গেছে। ফলে যারা টিকাকার্ড পাননি তারা শনিবার (গতকাল) টিকা নিতে পারবেন না। 

ওই কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা কামাল হোসেন সিলেট মিররকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে আটটায় আমি এসে লাইনে দাঁড়াই। কিন্তু সাড়ে ১২টায় জানানো হয় টিকাকার্ড শেষ হয়ে গেছে। ফলে আজ আর টিকা নিতে পারব না। কিন্তু অনেকেই লাইনে না দাঁড়িয়েও টিকা পেয়েছেন। আর আমি চারঘণ্টা দাঁড়িয়েও টিকা পাইনি।’

সকাল ৯টায় শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে টিকা নিতে আসেন তানিয়া বেগম। কিন্তু তিনিও টিকা পাননি। এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সরকার তো নারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে টিকা দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু বাচ্চাকে কোলে নিয়ে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও টিকা পাইনি। আবার কবে টিকা দেওয়া হবে তা-ও বলতে পারছেন না তারা।’ 

বিক্ষোভের খবর পেয়ে বেলা ১টার দিকে টিকাকেন্দ্রে আসেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মুহিত জাবেদ। এরপর তিনি কয়েকজন নারী-পুরুষকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। 

আব্দুল মুহিত জাবেদ সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমাদের কাছে ৩০০ ডোজের বেশি টিকা নেই। তাই তিনশর বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ধরনের ঘটনার শঙ্কা থেকে আমি ৫০ ডোজ টিকা আগেই রিজার্ভ করে রেখেছিলাম। সেখান থেকে বঞ্চিতদের টিকা দিয়েছি।’

সিসিক সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আগেই স্থানীয় কাউন্সিলরদের প্রতিটি ওয়ার্ডের টিকা গ্রহীতাদের তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বার বার সিদ্ধান্ত পাল্টানোয় শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এছাড়া চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তি, বস্তি ও নিম্ন আয়ের মানুষ যারা টিকা সম্পর্কে খুব একটা সচেতন নন তাদেরকে এই টিকায় অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। 

সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমাদের ব্যবস্থাপনায় কোনো ত্রুটি ছিল না। তবে মানুষের চেয়ে টিকা ছিল কম। সরকারের নির্দেশনা মতে প্রতিটি কেন্দ্রে ২০০ থেকে ২৫০ জনকে টিকা দেওয়ার কথা। কিন্তু আমরা শনিবার প্রতিটি কেন্দ্রে ৩০০ জনকে টিকা দিয়েছি। এর বেশি টিকা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই কেন্দ্রে আসা সবাইকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি।’ 

টিকা নিয়ে বিভ্রান্তির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষ মনে করেছেন টিকা ক্যাম্পেইন একদিন চলবে। ফলে তারা শনিবার ভিড় করেন বেশি। এসব বিষয়ে প্রচারণায় আমাদের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে।’ 

নগরে আজ রবিবার এবং আগামীকাল সোমবারও টিকা ক্যাম্পেইন চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় রবিবার ও সোমবার ৮১টি কেন্দ্রে টিকা ক্যাম্পেইন চলবে। প্রতি কেন্দ্রে প্রতিদিন ২০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। যারা আগে সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করে ম্যাসেজ পাননি তারাও এ দিন টিকা নিতে পারবেন। এছাড়া ২৫ বছরের বেশি বয়সী যে কেউ জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে গেলে টিকা দিতে পারবেন।’ 

শুধু সিটি করপোরেশন নয় জেলা ও বিভাগেরও বিভিন্ন জায়গায় টিকা না নিয়ে ফিরতে হয়ে অনেককে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত টিকা কার্যক্রম চলার কথা থাকলেও দুপুরের আগেই অনেক স্থানে শেষ হয়ে যায় টিকা। আমাদের ধর্মপাশা উপজেলা প্রতিনিধি জানান, শনিবার সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলায় ৬ হাজার ৮১৪ জন টিকা নিয়েছেন। তবে টিকা স্বল্পতার কারণে উপজেলার অনেকেই টিকা নিতে পারেননি। 

উপজেলার সুখাউড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ আহমেদ বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে টিকার স্বল্পতার কারণে তিন শতাধিক মানুষ টিকা না পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন।’ 

মৌলভীবাজার জেলার সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে জেলার ১১২টি কেন্দ্রের বরাদ্দকৃত টিকা শেষ হয়ে যায়। বরাদ্দ শেষ হওয়ায় অনেকেই গণটিকা কেন্দ্রে গিয়ে টিকা দিতে পারেননি। টিকার বরাদ্দ ও সরকার থেকে সিদ্ধান্ত এলে আবারও গণটিকা কার্যক্রম শুরু হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এনএইচ/আরসি-০৪