নাবিল হোসেন
আগস্ট ০৬, ২০২১
০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ০৬, ২০২১
০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন
করোনা সংক্রমণে বিপর্যস্ত সিলেট। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। গত বছর এপ্রিল মাসে সিলেটে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। এরপর কেটে গেছে ১৫ মাস। আগের বছর আট মাস করোনা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও চলতি বছর সংক্রমণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌছেছে। আগের বছর এপ্রিল-জুলাই চার মাসের সঙ্গে এ বছর এপ্রিল-জুলাইয়ের চিত্র ভয়ংকর। সংক্রমণ বেড়েছে সাড়ে চারগুণ আর মৃত্যু বেড়েছে প্রায় তিনগুণ।
গত বছরের ৫ এপ্রিল সিলেট বিভাগে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম মৃত্যু ঘটে ওই বছরের ১৫ এপ্রিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছরের এপ্রিলে বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়েছিল ১১০ জনের আর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ৩ জনের। ওই বছরের মে মাসে শনাক্ত হয় ৯৩০ জনের এবং মৃত্যু হয় ১৬ জনের। জুনে শনাক্ত হয় ৩ হাজার ৫৭৪ জনের আর মৃত্যু হয় ৫৮ জনের। জুলাই মাসে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৩ হাজার ৩০০ জনের এবং মৃত্যু হয় ৬৯ জনের।
এদিকে চলতি বছরের এপ্রিলে করোনা শনাক্ত হয় ৩ হাজার ২০১ জনের, মৃত্যু হয় ৬০ জনের। মে মাসে বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ২ হাজার ৪ জনের। এই মাসে মৃত্যু হয় ৫৯ জনের। জুনে করোনা শনাক্ত হয় ৩ হাজার ২৮৫ জনের এবং মৃত্যু হয় ৬৯ জনের। আর জুলাই মাসে শনাক্ত হয় ১৪ হাজার ৪৭১ জন আর এই মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২২৪ জনের।
গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই চারমাসে বিভাগে ৪ হাজার ৯১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে ১৪৬ জনের। আর চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই চারমাসে বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ২২ হাজার ৯৬১ জনের। আর চারমাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪১২ জন। অর্থাৎ গত বছরের থেকে এ বছরে সংক্রমণ বেড়েছে সাড়ে চারগুণ। এবং মৃত্যু বেড়েছে প্রায় ৩ গুন।
সিলেটে করোনা সংক্রমণের ৪৮৭ দিন চলছে। এরমধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মাস ছিল গতমাস। এক মাসে সংক্রমণ ও মৃত্যুর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে। এই মাসে শনাক্ত হয় ১৪ হাজার ৪৭১ জন আর মৃত্যু হয়েছে ২২৪ জনের। এর আগে গত বছরের জুনে একমাসে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫৭৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। আর এ বছরের জুনে একমাসে সর্বোচ্চ ৬৯ জনের মৃত্যু দেখেছিল সিলেট।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে ছড়িয়ে পরায় সংক্রমণ অনেক বেশি বাড়ছে। কারণ এটি অনেক বেশি সংক্রামক। এছাড়া এই ভ্যারিয়েন্টে মৃত্যুও ঘটছে বেশি।
গেল বছরে এপ্রিলে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর মে-জুনে শনাক্তের হার বাড়তে শুরু করে। তবে আগস্টের পর থেকে তা আবার কমতে শুরু হয়। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে সংক্রমণ ছিল নিয়ন্ত্রণে। তবে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে আবারও বাড়তে থাকে সংক্রমণ। এপ্রিলে বাড়ে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। মে মাসের প্রথম থেকে আবার শনাক্ত কমতে থাকলেও গত ঈদের পর তা বাড়তে শুরু করে। আর জুনের শেষ দিকে তা বাড়তে শুরু করে আশঙ্কাজনক হারে।
এদিকে শনাক্ত বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে চাপ বেড়েছে রোগীদের। এদিকে বিভাগীয় শহর হওয়ার সবচেয়ে বেশি চাপ বেড়েছে সিলেট মহানগরের হাসপাতালগুলোতে। ইতোমধ্যে মহানগরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নতুন শয্যা বাড়িয়ে রোগীদের জায়গা দিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কোনোভাবে একটি শয্যা মিললেও আইসিইউ শয্যা পাওয়া দুষ্কর। সিলেটের সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালেই একটি আইসিইউ শয্যা খালি নেই। এতে করে অনেক রোগীই মারা যাচ্ছেন।
গত ৩১ জুলাই মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে করোনা আক্রান্ত মাকে নিয়ে সিলেটে আসেন হারুন-উর-রশিদ। তবে দুই দিন সিলেটের হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে একটি আইসিইউ শয্যা যোগার করতে পারেননি। গত ২ আগস্ট তার মা মারা যান।
হারুন-উর-রশিদ সিলেট মিররকে বলেন, ‘বাড়িতে সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে আম্মার চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু দিনে দিনে উনার শারিরীক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। গত ৩১ জুলাই অ্যাম্বুলেন্সে করে আমরা আম্মাকে সিলেটে নিয়ে আসি। এসময় একটি শয্যা পেতে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরেছি। ঘুরতে ঘুরতে অ্যাম্বুলেন্সের অক্সিজেন পর্যন্ত শেষ হয়ে যায়। পরে কোনোমতে সিলেট ওমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যা মিললেও ডাক্তার জানান আম্মার আইসিইউ সাপোর্ট লাগবে। দুই দিন সিলেটের সব হাসপাতাল ঘুরেছি। কিন্তু একটি আইসিইউ শয্যা যোগার করতে পারিনি। এই অবস্থায় ২ আগস্ট আম্মা মারা যান।’
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত সিলেট মিররকে বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এই বছরে সংক্রমণ মৃত্যু দুটোই অনেক বেশি। এর মূল কারণ হচ্ছে ডেল্ট্যা ভ্যারিয়েন্ট। এটি অতীতের সব ভ্যারিয়েন্টের থেকে সবচেয়ে বেশি সংক্রামক। ফলে দ্রুত অনেক বেশি মানুষ করোনায় সংক্রমিত হচ্ছেন। এছাড়া এই ভ্যারিয়েন্টে মৃত্যুহারটাও অনেক বেশি। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সংক্রমণ না কমাতে পারলে শয্যা, আইসিইউ বাড়িয়েও কিছুতে কিছু হবে না।’
আরসি-০১