ওসমানী হাসপাতালে করোনা ইউনিট স্থাপনে অনিশ্চয়তা

শুয়াইব হাসান


আগস্ট ০২, ২০২১
১২:২২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০২, ২০২১
১২:২৮ পূর্বাহ্ন



ওসমানী হাসপাতালে করোনা ইউনিট স্থাপনে অনিশ্চয়তা
আট মাসেও অগ্রগতি নেই

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাড়ে চারশ শয্যার একটি করোনা ইউনিট স্থাপনের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আট মাস আগে এ সংস্ক্রান্ত একটি প্রস্তাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও এ ব্যাপারে অনুমতি পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় এটি আদৌ চালু হবে কি না-তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় সাড়ে চারশ শয্যাবিশিষ্ট করোনা ইউনিট চালু কথা ছিল। 

এদিকে প্রস্তাবিত করোনা ইউনিট চালুর ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবরে চিঠি দিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। প্রয়োজনে সিসিকের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেওয়ার কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। 

সিলেটে প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। নগরে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসায় প্রায় এক হাজার শয্যা এবং একশ আইসিইউ শয্যা থাকা সত্তে¡ও খালি নেই একটিও। হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি করাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন স্বজনরা। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে কেউ সুযোগ পাচ্ছেন আবার কেউ সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছেন। 

এ অবস্থায় ওসমানী হাসপাতালে সাড়ে চারশ শয্যার একটি করোনা ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এজন্য প্রয়োজনীয় বেড এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য যন্ত্রপাতি ক্রয়ও করা হয়। কিন্তু সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে উদ্যোগটি আলোর মুখ দেখছে না। 

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় মোট সাড়ে চারশ শয্যার করোনা ইউনিট চালুর বিষয়ে ৮ মাস আগে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীও কথা বলেছেন। গত এপ্রিলে আবারও প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিছুটা অগ্রগতি হলেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন না থাকায় এটি চালু করা যাচ্ছে না।’

অন্যদিকে, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় প্রস্তাবিত এই করোনা ইউনিট দ্রুত চালু করার জন্য সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ঈদের আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ‘সিলেটে যে হারে সংক্রমণ বেড়েছে তাতে ওসমানীর প্রস্তাবিত করোনা ইউনিট দ্রুত চালু করা প্রয়োজন। অক্সিজেন লাইন দ্রুত স্থাপন করে এটি চালু করলে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আর যদি সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপনে দেরি হয় কিংবা অপরাগতা প্রকাশ করা হয় তাহলে সিলেট সিটি করপোরেশন অনুমতি পেলে নিজস্ব খরচে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করে দেবে।’ 

সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবরে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন-করোনা চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রস্তাবিত ওসমানী হাসপাতালের সাড়ে ৪শ শয্যার করোনা ইউনিটটি দ্রæত চালু করা হোক।’

সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত বলেন, ‘লাইন স্থাপন করতে এক সপ্তাহ বা দশদিন সময় লাগবে। অনুমোদন হলে সেটা সপ্তাহ-দশদিনের মধ্যে স্থাপন করা সম্ভব।’

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সদ্যসাবেক উপপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলছেন, ‘নতুন ভবনে করোনার ইউনিট স্থাপনের জন্য বেডসহ যাবতীয় সবকিছু কেনা হয়েছে।  কেবল সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন বাকি আছে। এজন্য প্রায় ৩ কোটি টাকার মতো বাজেট প্রয়োজন। বরাদ্দ পেলে এটি খুব দ্রুত হয়ে যাবে।’

সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করে এই ইউনিট চালু করলে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়বে এবং অক্সিজেনের চাহিদা বাড়বে। সে পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ থাকবে কি না-এমন প্রশ্নে হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘ওসমানীতে আগে ১০ হাজার লিটারের অক্সিজেন প্লান্ট ছিল। সম্প্রতি আরও ২০ হাজার লিটার সংযুক্ত হয়েছে। তাই, চাহিদা বাড়লে সে পরিমাণে সাপোর্ট দিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’

বিভাগীয় শহর সিলেটে প্রতিদিন রোগীর চাপ বাড়ছে। ওসমানী হাসপাতাল, শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালসহ আরও দুটি উপজেলা হাসপাতাল এবং বেসরকারি ৯টি হাসপাতালে করোনা সেবা দেওয়া হচ্ছে। করোনা রোগীদের জন্য সবমিলিয়ে প্রায় এক হাজার শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় একশ আইসিইউ শয্যা রয়েছে। ওসমানীতে আরও ১০টি আইসিইউ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতো কিছুর পরও হাসপাতালে রোগীদের জায়গা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। 

সিলেটের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল চৌহাট্টাস্থ শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল থেকে সদ্য ছাড়পত্র পাওয়া রোগীর স্বজন জামিল হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তির জন্য বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাড়ে ৩শ’ রোগী অপেক্ষমান ছিলেন। মৃত্যু আর ছাড়পত্র পাওয়ার সুবাদে ঐদিন সর্বোচ্চ ২৭জনকে ভর্তির সুযোগ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।’ এভাবে প্রতিটি হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ভিড় লেগেই আছে। 

এসআই/বিএ-০৬