নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ৩১, ২০২১
০৪:৩২ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুলাই ৩১, ২০২১
০৪:৩২ পূর্বাহ্ন
সিলেট নগরের পনিটুলা এলাকা। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টা। পাড়ার ভেতরে বেশ কয়েকটি মুদি দোকানগুলো খোলা। চালু আছে চায়ের দোকানও। সেখানে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আড্ডায় মেতে উঠেছেন অনেকে। তরুণ থেকে বৃদ্ধ, অনেকেই এ তালিকায় আছেন।
সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা, অধিকাংশের মুখে মাস্কই নেই। কেবল পনিটুলা এলাকাই নয়, সরকারি কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে নগরের অধিকাংশ পাড়া-মহল্লাতেই এমন চিত্র দেখা গেছে।
সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের পাঠানটুলা, দরগাগেট, বনকলাপাড়া, শিবগঞ্জ, কুমারপাড়া, শাহী ঈদগাহ, উপশহর, সোবহানীঘাট, চালিবন্দর, কাজিরবাজার, শেখঘাট, কালীবাড়ি, আখালিয়া, লামাপাড়া, বালুচর, কাজীটুলা, চৌকিদেখি, করেরপাড়া, হাওলদারপাড়াসহ অনেক এলাকার পাড়া-মহল্লায় মুদির দোকান থেকে শুরু করে চায়ের টং এবং রেস্তোরাঁ চালু আছে। সেখানে দেদারসে বেচাকেনা চলছে। চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কিংবা ভেতরে বসে আড্ডা দিতে দিতে অনেকেই চা পান করছেন।
নগরের কয়েকজন সচেতন বাসিন্দা জানিয়েছেন, সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে গেলেও মানুষের মধ্যে এখনও সচেতনতার অভাব রয়েছে। কঠোর বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে দিনের বেলা অনেকে অযথাই বাসার বাইরে বেরোচ্ছেন। মাস্ক ছাড়া হাটবাজারে অনেকে চষে বেড়াচ্ছেন। চলাচল করছে যানবাহনও। তবে কিছু কিছু এলাকায় পুলিশের কড়াকড়ির কারণে মানুষের চলাচল সীমিত থাকলেও সুযোগ বুঝে অনেকেই বাসার বাইরে যাচ্ছেন। অনেকে জরুরি প্রয়োজনে বাইরে এলেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করছেন না। তবে সাধারণত দিনের বেলা পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কড়াকড়ি থাকায় আড্ডা জমে না। সন্ধ্যার পর তুলনামূলকভাবে পুলিশের কড়াকড়ি কম থাকায় পাড়া-মহল্লাগুলো আড্ডা জমে উঠে। কোথাও কোথাও রাত ১২টা থেকে একটা পর্যন্ত আড্ডা চলে।
পাঠানটুলা তারাপুর চা-বাগান এলাকায় গতকাল সন্ধ্যায় আড্ডারত কয়েকজন তরুণ জানান, সারা দিন ঘরে বসে থাকতে থাকতে তাঁরা হাফিয়ে উঠেন। এ কারণে বন্ধুরা মিলে মানসিক প্রশান্তির জন্য সন্ধ্যার বেলা বাসার বাইরে বের হন। হাঁটার পাশাপাশি তাঁরা কোনো চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চা পান শেষে বাসায় ফিরেন। দরগাগেট এলাকার দুজন দোকানি জানান, সন্ধ্যার পর মাঝেমধ্যে টহল পুলিশ আসে। এ সময় তাঁরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত সাটার ফেলে দেন। পরে পুলিশ চলে গেলে পুনরায় সাটার খুলে ব্যবসা করেন। একই এলাকায় দুজন তরুণের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, সন্ধ্যার পর থেকে প্রশাসনের তৎপরতা কম থাকে। এ সুযোগে অনেকেই বাসা থেকে বের হন।
কাজিরবাজার সেতুতে ফ্লাক্সে করে চা বিক্রিরত এক কিশোর জানিয়েছে, ঘরে তার অসুস্থ বাবা। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। তাই বাধ্য হয়ে পরিবার চালাতেই সে চা বিক্রি করে থাকে। নগরের বিভিন্ন এলাকার একাধিক চায়ের দোকানের ব্যবসায়ী জানান, কঠোর বিধিনিষেধের কারণে দোকান খুলতে নিষেধাজ্ঞা আছে, এটা তাঁরা জানেন। তবে করোনাপরিস্থিতিতে আয় কমে যাওয়ায় তাঁরা পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় অনেকটা বাধ্য হয়েই তাঁরা সামান্য আয়ের আশায় দোকান খুলছেন।
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে। তাই করোনার সংক্রমণ যেন ছড়াতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে যাওয়া যাবে না। যাঁরা জরুরি কারণে বাসার বাইরে যাবেন, তাঁদের অবশ্যই মাস্ক মুখে লাগিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বের হতে হবে।
আরসি-০১