ফারহান মাসউদ আফছর, গোলাপগঞ্জ
জুলাই ৩০, ২০২১
১০:০২ অপরাহ্ন
আপডেট : জুলাই ৩০, ২০২১
১০:০২ অপরাহ্ন
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর মোকামবাজার-পুরকায়স্থবাজার-জামিটিকি-ঘোষগাঁও-কদমতলী (উপজেলা সদর) পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কটি এখন নতুন রূপ নিয়েছে। ঝকঝকে মসৃণ কালো পিচঢালা সড়কটি গ্রাম-বাজার ছাড়িয়ে চলে গেছে উপজেলার উত্তর-দক্ষিণে। সড়কটি সংস্কারের পাশাপাশি কয়েক কিলোমিটার প্রশস্তকরণ করা হয়েছে। এছাড়া সড়কটি মজবুত করতে বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে সীমানা প্রাচীর। ইতোমধ্যে সড়কটির নির্মাণ কাজের প্রায় ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। আসছে আগস্ট মাসেই এর কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে জানান উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান।
এদিকে, ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি উন্নয়নের মাধ্যমে গোলাপগঞ্জ-ঢাকাদক্ষিণ-ভাদেশ্বর পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগের বিকল্প একটি রুট শুরু হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় জনসাধারণসহ সংশ্লিষ্টরা। এজন্য তারা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও সিলেট-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদকে ধন্যবাদ জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভাদেশ্বর মোকামবাজার-পুরকায়স্থ বাজার-জামিটিকি-ঘোষগাঁও ও কদমতলী (উপজেলা সদর) পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কটি উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। ভাদেশ্বর ইউনিয়নের মোকাম বাজার থেকে সড়কটি কুড়ীর বাজার ও লক্ষনাবন্দ ইউনিয়নের পুরকায়স্থ বাজার হয়ে ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের জ্যামিটিকি হয়ে পৌরসভার ঘোষগাঁওয়ের মধ্য দিয়ে উপজেলা সদরের কদমতলী পয়েন্টে গিয়ে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটির উন্নয়ন কাজটি শুরু হয়। ইতোমধ্যে সড়কটির উন্নয়ন কাজের প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে গাড়ি চলাচল সুগম করতে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কটির ৩ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ততকরণ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সড়কটি দিয়ে ভাদেশ্বর, ঢাকাদক্ষিণ, লক্ষনাবন্দ ইউনিয়ন ও গোলাপগঞ্জ পৌরসভার হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। উপজেলার বিশাল অংশের মানুষের যাতায়াতের একটি অন্যতম মাধ্যম এই সড়কটি। গোলাপগঞ্জ-ঢাকাদক্ষিণ-ভাদেশ্বর সড়ক কোনো কারণে বন্ধ হলে এই সড়কটি বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায় বলে জানান স্থানীয়রা। তবে বেশ কিছুদিন থেকে সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যাতায়াতে মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছিলেন। এখন সড়কটির সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ প্রায় সম্পন্ন হওয়ায় উৎফুল্ল এলাকাবাসী। সড়কটির উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হলে এই সড়ক দিয়ে এলাকার মানুষ সহজেই কম সময়ে সিলেটসহ যে কোনো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন বলে জানান তারা।
ভাদেশ্বর মোকাম বাজার শাখার সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক রুবেল আহমদ বলেন, গাড়ি নিয়ে প্রায়ই এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। সড়কটির উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হওয়ায় যাত্রী ও চালকসহ সবাই উপকৃত হবেন। রাস্তাটি সংস্কার করায় তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
লক্ষনাবন্দ ইউনিয়নের করগ্রাম এলাকার বাসিন্দা ভাদেশ্বর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ কে এম মাহবুবুছ ছামাদ বলেন, উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এটি। সর্বস্তরের জনসাধারণের পাশাপাশি একাধিক স্কুল-কলেজের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। সড়কটি সংস্কারের পাশাপাশি এর সংকীর্ণ অংশগুলো প্রশস্ত করায় গাড়ি চলাচল আরও সুগম হবে এবং শিক্ষার্থীরাসহ উপজেলার বিশাল অংশের জনসাধারণ উপকৃত হবেন। সড়কটি সংস্কার করার জন্য আমি সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের জামিটিকি এলাকার বাসিন্দা রিমন আহমদ বলেন, এই সড়ক দিয়ে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। যাতায়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি সংস্কার করায় এলাকার মানুষ অনেক উপকৃত হবেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক নাজিমুল হক লস্কর বলেন, সংস্কার কাজ শেষ হলে অত্র এলাকার জনগণের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্খা পূর্ণ হবে ও তারা নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবেন।
সড়কটির উন্নয়ন কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে জানিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান বলেন, উপজেলার সড়কটির উন্নয়ন কাজ মানসম্মতভাবে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী আগস্ট মাসের মধ্যেই কাজটি সমাপ্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সড়কটির বিভিন্ন অংশের প্রস্থ ৮ ফুট থেকে বৃদ্ধি করে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার অংশ ৪ ফুট বৃদ্ধি করে ১২ ফুট প্রশস্ত করা হয়েছে ও জলাবদ্ধতাপূর্ণ বেশ কয়েকটি অংশে গার্ডওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে সড়কটি অনেক বেশি টেকসই ও যাতায়াতের জন্য সুবিধাজনক হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে আজ উন্নয়নের রোল মডেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কৃষি, বিদ্যুৎ, পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্পসহ সকল ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের ধারাবাহিক উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রায় ২০৪১ সালে দেশ চলে যাবে উন্নত দেশের কাতারে। গোলাপগঞ্জে ১৩ কিলোমিটার সড়কটির সংস্কার কাজ হওয়ায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও সাহসী নেতৃত্বে দেশের স্থলযোগাযোগ অবকাঠামোসহ সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হলে ভাদেশ্বর, লক্ষনাবন্দ, ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়ন ও গোলাপগঞ্জ পৌরসভার একাংশের মানুষ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন। সাধারণ মানুষের উন্নয়ন জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের মূল লক্ষ্য। সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে এবং করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও সিলেট-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের নানা উন্নয়নমুখী পরিকল্পনার সুফল এখন মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ খাত, রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে উন্নতির ছোঁয়া লাগেনি। তেমনিভাবে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং হচ্ছে। আগামীদিনেও এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। সড়কটি সংস্কার হওয়ায় মানুষের যাতায়াত আরও সুগম হবে এবং এটি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার যোগ্য নেতৃত্বে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। এ সময় তিনি করোনা সংক্রমণরোধে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান।
এফএম/আরআর-০১