নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ১৩, ২০২০
০৭:৩০ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৪
০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন
-ফেসবুক থেকে নেওয়া
করোনাভাইরাসের প্রভাবে সবকিছুই স্থবির। স্থবির হয়ে আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। তবে শিক্ষার্থীদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম ও পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। ইউজিসিও শেষ পর্যন্ত সেটাকে সমর্থন জানায়। তবে শিক্ষার্থীদের অনেকেই এ অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রমকে ‘নাটক’ বলে উল্লেখ করে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছেন। অবিলম্বে এই কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়ে আন্দোলনও শুরু করেছেন। দাবি জানিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক সেমিস্টার ফি মওকুফের।
করোনাভাইরাসের কারণে স্ব-শরীরে রাস্তায় আন্দোলনে নামতে পারেননি শিক্ষার্থীরা। তবে ফেসবুকের মাধ্যমে ‘ভার্চুয়াল’ আন্দোলনে তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। ইতোমধ্যে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সেমিস্টার ফি মওকুফ চাই’ বলে গ্রæপে তারা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। বাংলাদেশের প্রায় সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেখানে জড়ো হয়েছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ঐক্যের উদ্যোগে এই আন্দোলন চলছে বলে জানা যায়। সিলেটেও কয়েকজন এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
তাদের দাবি, সিলেটের চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক সেমিস্টারের পুরো টাকা মওকুফ করে দিতে হবে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সেমিস্টারের টাকা নেয় ভেঙে ভেঙে। প্রতি মাসে আবার বেতনও নিয়ে থাকে। সেটাও এই সেমিস্টার ফি এর অন্তর্ভূক্ত বলে তারা সেটাও মওকুফের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বরাবর। সেই সঙ্গে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও শিক্ষকের বেতন না কাটারও দাবি জানিয়েছেন।
তারা জানান, তাদের দাবি ইউজিসির কাছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে তাদের এই আন্দোলনে কোনো সমর্থন পাচ্ছেন না। এমনকি ইউজিসি যখন সিদ্ধান্ত জানানোর আগে দোটানায় ছিল তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তড়িঘড়ি করে অনলাইনে পরীক্ষার রুটিন দেয় বলেও তরা জানান।
এই বিষয়ে লিডিং ইউনিভার্সিটি সিলেটের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান প্রান্তিক সিলেট মিররকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরাও পড়াশোনা করেন। করোনাভাইরাসের কারণে তাদের পরিবার প্রায় আয়হীন হয়ে গেছেন। অনেকেই ঘরের খাবার ঠিকমতো জোগাড় করতে পারছেন না। এই অবস্থায় বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চাপ দিচ্ছে অনলাইনে বেতন পরিশোধ করার জন্য। মানুষের কথা চিন্তা করেই আমাদের এই আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের এক সেমিস্টারের ফি মওকুফ করা আমাদের দাবি।
শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি মওকুফ করে দিলে প্রশাসনের বেতন দেওয়া হবে কি করে! সেই প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে। এই বিষয়ে আন্দোলন কর্মী ও সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মনীষা ওয়াহীদ বলেন, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল রয়েছে। সেই তহবিল থেকে বেতন পরিশোধ করা যাবে। যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে টাকা না থাকে তাহলে সরকার থেকে শিক্ষা খাতে প্রণোদনার দাবিও আমরা জানিয়েছি। আসন্ন জাতীয় বাজেটে শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেটের পরিমাণ বাড়ানোর দাবিও আমরা জানিয়েছি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই কার্যক্রমকে তারা নাটক বলে উল্লেখ করার কারণ জানতে চাইলে মনীষা ওয়াহিদ বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামো এখনও এত উন্নত নয়। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমও একেবারেই নতুন। শ্রেণি কার্যক্রমের জন্য যা মোটেই আদর্শ নয়। বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একেবারেই নয়। তাই এটা নাটক ছাড়া অন্য কিছু নয়।
এই বিষয়ে তিনি আরও বলেন, অনেক শিক্ষার্থী সিলেটে অস্থায়ীভাবে বসবাস করে। বন্ধের এই সময়ে অনেকে গ্রামে চলে গেছেন। সিলেটের এখনও অনেক গ্রামে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা এখনও শক্তিশালি হয়নি। অনেক জায়গায় দোকানপাটও খোলা থাকে না লকডাউনের কারণে। তাই ইন্টারনেটের ডাটা কেনাও সম্ভব হয় না। তাই অনলাইনে ক্লাসে বা পরীক্ষায় অংশ নেওয়াটা অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য। তাই মহামারীর এই সময়ে অনলাইনের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছি আমরা।
সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আনজুম লুবাবা বলেন, ল্যাব ক্লাসগুলো আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেগুলো অনলাইনে নেওয়া সম্ভব না। থিওরি ও ম্যাথমেথিক্যালগুলা যদিও সম্ভব হচ্ছে। তাছাড়া অনলাইনে স্টুডেন্ট পাওয়া যায় না বলে স্যাররা ভিডিও আপ্লোড দিয়ে দিচ্ছেন। এখন আবার শুনছি অনলাইনে পরীক্ষাও হবে। যা অনেকের পক্ষেই দেওয়া সম্ভব না।
অনলাইনের শ্রেণি কার্যক্রম কখনই প্রতিষ্ঠানে স্ব-শরীরে শ্রেণি কার্যক্রমের বিকল্প হতে পারে না মনে করেন নর্থইস্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের আইন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. নাইম আলিমুল হায়দার।
সিলেট মিররকে তিনি বলেন, যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষকই সেটা বলে থাকবেন। কারণ মুখোমুখি ক্লাসে আমরা যতটা শিক্ষার্থীদের বুঝাতে পারি, অনলাইনে সেটা বোঝানো অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। তবুও ইউজিসির নির্দেশনা মেনেই আমাদের কাজ করতে হবে।
তবে শিক্ষার্থীদের অসুবিধার বিষয়টিও তাঁরা দেখছেন জানিয়ে বলেন, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসে থাকলেও অনেকেই থাকতে পারে না। কারণ গ্রামে ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। তাদেরকে আমরা এই ক্ষেত্রে ছাড় দিচ্ছি। কারণ নেটওয়ার্ক না থাকলে তার অন্য কোনো পথ খোলা নেই।
আরসি-০১/বিএ-১১